মুক্তাগাছায় এসেছি।
মুক্তাগাছা আসা খুব জরুরি ব্যাপার নয়,
সমাজ-সংসারে মুক্তাগাছা
নয় কোনো আরাধ্য ব্যাপার
যার জন্যে না খেয়ে ফুলিয়ে গাল সারাটা সকাল
বসে থাকবে অভিমানী মেয়ে,
চুলের কাঁকই ফেলে চোখের উদ্গত জল চাপতে জানালায়
ছুটে যাবে সদ্যযুবতী কোনো বধূ—
মুক্তাগাছা কারও পীরিতি পরাননিধি নয়।
তবু মুক্তাগাছা যেতে হয়, তবু যাই,
তবু আজ এসেছি মুক্তাগাছায়।
এইখানে সূর্য-শশী আছে—
ভাঙা ইতিহাসের ধুলা নড়বড়ে জানালা কবাটে
নিয়ে জেগে আছে হু হু করা রাজবাড়ি।
আলাপসিংহের ঘোড়া জয়েনশাহীর লাল পাহাড়ি প্রান্তরে
ছুটে গেছে দুর্দমন; এইখানে একদিন
লাল গালিচার ’পর লুটোপুটি খেয়েছিল আলাপ ভৈরবী।
সেগুন কাঠের বরগা খুলে নিয়ে চলে গেলে আনপড় চোর
দেয়ালের চোখ বেয়ে নেমে আসে জলধারা;
এখানে ক্রন্দন আছে চাষিদের লুণ্ঠনের হাহা আর্তস্বর
আর আছে অনিবার্য কালের কল্লোলে মেশা
বাংলার সামন্ত গৌরব, পড়ে-পাওয়া তেরো আনা যেন
ধুতির নরম পাড়ে জরির নকশার মতো সুরের ঝংকার।
মুক্তাগাছা অনিবার্য নয়।
তবু মুক্তাগাছা মন টানে, যে রকম পূর্বজনমের ভার
যে রকম হারানো সময়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৯, ২০১১
Leave a Reply