গোসাঁইর ভাব যেহি ধারা–
আছে সাধু শাস্ত্রে তার
প্রমাণ আচার
মনুষেও জীবন অমনি হয় সারা॥(১)
ও সে মরার সঙ্গে মরে
ভাবের সাগরে
ডুবতে যদি পারে সু-ভাবিক তারা।।(২)
দুগ্ধেতে ননীতে মিশালে সর্বদা(৩)
মৈথন-দণ্ডে করে আলাদা আলাদা।
মনরে, এমনি ভাবের ভাবে
সুধানিধি পাবে
মুখের কথা নয়রে সে ভাব করা॥
অগ্নি যৈছে ঢাকা ভস্মের ভিতরে
সুধা তেমনি আছে গরল হল করে
ও কেউ সুধার লোভে যেয়ে(৪)
মরে গরল খেয়ে
মন্থনের সুতার না জানে তারা॥
যে স্তনে দুগ্ধ খায় রে শিশু-ছেলে
জোঁকে মুখ লাগালে রক্ত এসে মেলে।
অধীন লালন বলে
বিচার করিলে
কু-রসে সু-রসে মেলে সেই ধারা॥
———-
লালন ফকির : কবি ও কাব্য, পৃ. ২০৭-০৮; লালন গীতিকা, পৃ. ৪৪-৪৫
কথান্তর :
১) শুন রে জীবন অমনি হয় সারা।
২) ডুবতে পারে তাহে রসিক যারা।
৩) দুগ্ধেতে-জলেতে মিশালে সর্বদা।
৪) যে জন সুধার লোভে যেয়ে।
বাংলার বাউল ও বাউল গান, পৃ. ৫১-৫২
মূলত এখানে কতক শব্দের ক্ষেত্রেই পাঠভেদ আছে। ভাবের ধারাবাহিকতা ছন্দরীতি ও সামগ্রিক সুর-কাঠামোটি অভিন্ন আছে। এর স্তবক-বিন্যাস ও সুর-কাঠামোটি স্বতন্ত্রধর্মী। ছোট-বড় পঙক্তির সাহায্যে নাচের ভঙ্গি আনা হয়েছে। বাউল-নাচে হাতের মুদ্রার কোন কাজ নেই, কেননা হাতে একতারা ও বাঁয়া থাকে। কোমর দুলিয়া ও পায়ের গোড়ালির ওপর ভর করে বাউল নাচে ও গান করে। গানের সুর ও ছন্দের সাথে পায়ের গতি ও তাল রক্ষা হয়।
রবীন্দ্র-সদনে রক্ষিত একই গান “দীনের ভাব যেহি ধারা” এরূপ সূচক চরণ দিয়ে শুরু হয়েছে। পৃ. ২১৪) উভয় পাঠে কিছু কথান্তর আছে।
Leave a Reply