এক. ‘এই, তুমি তো বাচ্চা ছেলে! রিকশা চালাও কেন?’
‘উঠেন মামা, কই যাইবেন?’
গ্রিনরোড-পান্থপথের মোড়ে চঞ্চল ও ছেলেটির মধ্যে প্রথম সংলাপ। রিকশা ধানমন্ডির দিকে যেতে যেতে তাদের মধ্যে আরও অনেক কথা হয়। অফিসের সামনে রিকশা থেকে নেমে চঞ্চল ভাড়া মেটায়।
‘এই অফিসে আমি কাজ করি। কখনো কোনো প্রয়োজন হলে এসো, কেমন?’
দুদিন পর এক সন্ধ্যায় চঞ্চলের অফিসে ছেলেটি হাজির। তার ঠোঁট ফোলা, চোখে পানি।
‘এই! কী বিষয়? কান্না কেন?’ চঞ্চল বইয়ের ভাষায় কথা বলে।
‘মামা, গাড়ি চুরি গেছে। মালিকে পিডাইল, টেকা-পইসা কাইড়্যা নিয়া খেদাই দিল।’
চঞ্চল একসময় গরিব মানুষের রাজনীতি করত। এখন দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। কিন্তু গরিব মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক আত্মার, অতএব অটুট—সে নিজে এ রকম দাবি করে।
‘পেটাল? তুমি এই এত্তটুকুন ছেলে, তোমাকে পেটাল? পশু নাকি? বর্বর?’
দুই. ‘মামা, এইডা আপনে?’
‘আমার মতো লাগে?’
‘টুপিডা তো আপনের মতন দেখা যায়।’
‘ইনি চে।’
‘নাম কী?
‘চে গুয়েভারা। মহান বিপ্লবী।’
‘নাম কী মামা?’
‘নামই তো বলছি। চে গুয়েভারা।’
‘চে…?’
‘হ্যাঁ, শুধু চে বললেও চলবে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তাঁকে খুন করেছে। কিন্তু তাঁর স্বপ্নকে খুন করতে পারেনি। সাম্রাজ্যবাদের পিতারও সে সাধ্য নেই। তাঁকে শ্রদ্ধা করবে, কেমন?’
‘হ।’
ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে চঞ্চলের দেড় ঘরের ভাড়া বাসার আধখানা ঘরের দেয়ালে এক বিশাল পোস্টারকে কেন্দ্র করে চঞ্চল ও ছেলেটির সংলাপ। চঞ্চলের বউ, যে জাতিসংঘের এক সংস্থায় চাকরি করত আর চঞ্চলকে বলত, ‘তোমার চাকরি করার দরকার নাই, তুমি লেখালেখি করো’, সে মাস ছয়েক আগে তাকে ছেড়ে চলে গেছে। ফলে চঞ্চলকে পেটের দায়ে একটা চাকরি খুঁজে নিতে হয়েছে, আগের বাসাটি ছেড়ে দিয়ে এই ছোট্ট বাসাটি ভাড়া নিতে হয়েছে, জোগাড় করতে হয়েছে মধ্যবয়সী একজন ছুটা বুয়া, যে সকালে এসে রান্না করে, ঘর ঝাড়ু দিয়ে চলে যায়।
‘কী নাম তোমার?’
‘নাম মামা কাল্লু।’
‘কাল্লু! এটা একটা নাম হলো?’
‘জে মামা, এই নামেই আমারে ডাকে।’
‘ফরগেট ইট! তোমার নাম কালাম।’
তিন. কালাম এখন চঞ্চলের বাসার আধখানা ঘরটিতে থাকে। চঞ্চল তাকে একটি তোশক ও একখানা মশারি কিনে দিয়েছে। মেঝেতে তোশক বিছিয়ে মশারি টাঙিয়ে কালাম আরামে ঘুমায়। সকালে উঠে তোশক গুটিয়ে, মশারি গুছিয়ে রাখে। বুয়া এসে নাশতা বানায়। কালাম চঞ্চলের সঙ্গে বসে ব্রেকফাস্ট করে। সকাল সাড়ে নটা পর্যন্ত চঞ্চল তাকে বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা শেখায়। তারপর অফিসে চলে যায় (বাসার দরজা বাইরে থেকে লক করে)। কালাম সারা দিন বসে বসে টিভি দেখে।
চঞ্চল পরের মাসে বেতন পেয়ে বাড়িভাড়া মিটিয়ে একটা রিকশা কেনে। কালাম সকাল দশটার দিকে রিকশা নিয়ে বের হয়ে যায়। চঞ্চল কালামের রিকশায় চড়ে না, অফিসে যায় অন্যদের রিকশায়। রাত দশটা নাগাদ সে বাসায় ফেরে। কালাম ফেরে তার আগেই (চঞ্চল ইতিমধ্যে তাকে একটি ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়ে দিয়েছে।)।
‘দুপুরে খেয়েছিলে তো?’
‘জে মামা।’
‘পেট ভরে খাবে। পানি খাবে বেশি বেশি। রিকশা চালানো খুব পরিশ্রমের কাজ। আর তুমি তো ছোট ছেলে, শরীরে পানিশূন্যতা ঘটলে বিপদ হতে পারে।’
‘জে মামা।’
‘পেপারটা হাতে নাও। একটা খবর পড়ে শোনাও তো দেখি, কেমন পড়তে পার এখন!’
কালাম উচ্চ স্বরে খবরের কাগজ পড়ে। চঞ্চলের চোখেমুখে সন্তোষ।
‘ইংলিশের কী অবস্থা? বলো তো সাম্যবাদের ইংলিশ কী?’
কালাম নীরব। মুখে লজ্জা।
‘কমিউনিজম। কতবার বলেছি তোমাকে, মনে থাকছে না কেন, বলো তো?’
‘কঠিন, মামা।’
‘বোকা ছেলে, কঠিন হবে কেন? বলো কমিউনিজম। বলো বলো, আমার সঙ্গে বলো, কমিউনিজম।’
‘কমনিজন।’
‘নো নো, বলো কমিউ, বলো!’
‘কমিউ…।’
চার. ‘বুয়া, আমার কাপড়গুলা ধুইয়া দেও তো। বেজায় মইলা হইছে।’
‘আমি এ বাসায় কাপড় ধুই না।’
‘ক্যান? ধোও না ক্যান?’
‘সায়েবের কাপড় হে নিজেই ধোয়।’
‘আমার কাপড় তুমি ধুইবা।’
‘তুই আমারে হুকুম করার কে?’
‘আবার তুই! তোমারে না কইছি, আমারে তুই কইবা না?’
‘তরে আপনে হুজুর কইতে হইব? কোনহানের লাটসায়েব আইছস তুই?’
চঞ্চলের শোবার ঘরের দরজা বন্ধ। তবু তার ঘুম ভেঙে গেল। পাশের ঘরটিতে বুয়া ও কালামের ঝগড়া চলছে। সে কান খাড়া করল।
‘বেদ্দপি কর আমার লগে? খাড়াও, মামায় আগে উঠুক, আজ তোমার কী বেবস্তা করি..।’
‘তুই আমার কী বেবস্তা করবি? তুই কেডা?’
‘চুপ কর্ মাগি!’
রান্না শেষ করে বুয়া চলে গেলে চঞ্চল ও কালাম নাশতার টেবিলে।
‘ভদ্রতা শিখতে হবে। বয়সে বড় মানুষের সঙ্গে সম্মান করে কথা বলতে হয়, কেমন?’
‘এই বুয়া মামা খুব বেদ্দপ। মুখে মুখে তক্ক করে। কাপড় ধুইতে কইলাম, কী মেজাজ! চিক্কুর পাইড়্যা উঠল, কাপড় আমি ধুই না!
‘নিজের কাপড় কিন্তু নিজেই ধোয়া উচিত। আমি তো ধুই।
‘ক্যান? বুয়ারে আপনে টেকা দেন না? হে এই বাসায় কাম করে না?
পাঁচ. ‘মামা, ছুডোমুডো একখান খাট কিনন যাইত না? মাটিত ঘুমাইতে কেমুন কেমুন লাগে। গায়ের মদ্যে পোক উডে।’
‘তোমার হাতে টাকা জমেছে না? কিনে আনো একটা খাট, প্রবলেম কী?’
‘আমার হাতে আর কয় টেকা জমছে মামা!’
‘অলরাইট, খাটের অর্ধেক দাম আমি দেব। বাকি অর্ধেক তোমার, কেমন?’
কালামের খাট এল।
ছয়. ‘একখান ডিভিডি কিনন যাইত না, মামা?’
‘কী?’
‘ডিভিডি মামা, ফিলিম দেখতাম।’
‘টিভিতে তো ফিল্ম দেখা যায়।’
‘সুখ নাই মামা, খালি বিজ্ঞাপন খালি বিজ্ঞাপন। একখান ডিভিডি হইলে নিজের ইচ্ছামতন ফিলিম দেখা যাইত। আপনের সাধ-আল্লাদ নাই?’
‘বেশ তো! তোমার হাতে তো টাকা জমেছে। কিনে আনো।’
‘মামা, এইডা একখান কতা কইলেন? সখ কইর্যাও তো ভাগিনারে একখান জিনিস দিতে পারেন মামা। পারেন না, কন?’
‘আমি তোমাকে অনেক বই কিনে দিতে পারি।’
‘বই একখান জিনিস হইল মামা?’
‘কিন্তু ডিভিডি প্লেয়ার আমি তোমাকে কিনে দিচ্ছি না, ওকে?’
‘ওকে না মামা। ডিভিডি কিনতেই হইব।’
‘জিদ করবে না, কেমন? জিদ করা ভালো না।’
সাত. চঞ্চলের বাসায় কালামের চতুর্থ মাস। তিন মাসে তার আয় কত হয়েছে সে হিসাব রাখেনি, তবে হাতে জমেছে ২১ হাজার ৬৯০ টাকা। সাড়ে তিন হাজার টাকায় সে গতকাল বিকেলে একটি ডিভিডি প্লেয়ার কিনে এনেছে; রাত ১০টায় চঞ্চল ফিরে আসার আগ পর্যন্ত সে দেখেছে দুটি হিন্দি ছবি। আজ সকালে সে রিকশা নিয়ে বেরিয়েছিল, কিন্তু বেলা দুটো না বাজতেই ফিরে এসেছে। গোসল করে ফ্রিজ থেকে ভাত-তরকারি বের করে চুলো ধরিয়ে গরম করে খেয়েছে। তারপর দেখতে বসেছে ফিল্ম। প্রিয়াংকা চোপড়াকে তার ভালো লাগছে।
আট. ‘রেশকা চালাইতে বহুত কষ্ট মামা। আর কী রোইদ দিতাছে, দেখতাছেন তো। জিব্বা বারায়া যায় মামা। আমারে একখান চারকির বেবস্তা কইর্যা দেন। আপনের অপিসে পিওন-দারোয়ান, যেকুনো চারকি মামা।’
‘পিয়নের চাকরি পেতে হলেও মিনিমাম ম্যাট্রিক পাস করতে হয়, বুঝলে! কিন্তু তুমি তো পড়াশোনা করনি।’
‘ম্যাট্রিক পাস লাগব না, আপনে পারবেন মামা। আপনে কইলেই হইব।’
‘পাগল ছেলে! আমি বললেই হবে? আমি কি মালিক?’
‘বুজি না মামা। তয় রেশকা আর চালাইতে পারুম না। এইডা মানুষের কাম না। জানোয়ারের খাটনি!’
নয়. ‘মামু, সব্বনাশ হয়্যা গেছে!’
‘কী হয়েছে?’
‘সাতরাস্তার মোড়ে মামা, পেসেনজার নামায়া, গাড়ি রাইখ্যা চা খাইতাছি, এট্টু পরে চায়া দেখি আমার রেশকা নাই। আমার খালি রেশকা চুরি যায় ক্যান মামা? কী কপাল আমার!’
‘কপাল বলে কিছু নেই কালাম। দোষ তোমার বুদ্ধির। একটু অসতর্ক হলেই যে চোখের পলকে রিকশা চুরি হয়ে যায় সে অভিজ্ঞতা তো তোমার হয়েছে একবার। তবু কেন সতর্ক হলে না?’
‘অহন কী করি মামা?’
‘কী আর করবে, একটা রিকশা কিনে নাও।’
‘রেশকার দাম ত মামা আট হাজার টেকা।’
‘তোমার টাকা নেই?’
‘আমার আবার টেকা!’
‘দিনে যদি ৩০০ টাকা আয় হয়, তাহলে মাসে নয় হাজার। তিন মাসে ২৭ হাজার। তোমার তো থাকার খরচ নেই, সকাল-সন্ধ্যা আমার সঙ্গে খাও, কেনাকাটা কিছুই করতে হয় না। তুমি তো এখন ধনীলোক কালাম!’
‘হিংসা করতাছেন মামা?’
‘কালাম, তোমার হাতে এখন টাকা আছে। নাউ ইউ ক্যান স্ট্যান্ড অন ইউর ঔন ফুট। আগে তোমার কাজের হাতিয়ারের মালিক তুমি নিজে ছিলে না, মালিক ছিল মহাজন। সে তোমাকে এক্সপ্লোয়েট করত। তারপর আমি যখন তোমাকে একটা রিকশা কিনে দিলাম, তখনো তোমার একটা সীমাবদ্ধতা ছিল, কারণ ওই রিকশাটি ছিল আমার করুণার দান। কিন্তু এখন তুমি নিজেই হতে পার তোমার কাজের হাতিয়ারের মালিক। সো, ইউ শুড বি প্রাউড অব দ্যাট। তুমি গর্বের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে গিয়ে এখন একটা ঝকঝকে নতুন রিকশা কিনে এনে আমাকে দেখাও—মামা, এই যে দ্যাখেন, আমার অ্যাচিভমেন্ট…।’
কালাম ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল চঞ্চলের মুখের দিকে।
দশ. ‘গাড়ি কিনন লাগত না মামা। রেশকা আর চালামু না।’
‘তাহলে কী করবে?’
‘আপনে আমারে সকাল-সন্ধ্যা লেখাপড়া শিকান। তারপর একখান চারকি দিবেন।’
‘গুড! ভেরি গুড! তুমি এক বছর প্রস্তুতি নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেবে, কেমন?’
‘জে মামা! আমি রেডি।’
‘কিন্তু সারা দিন তো আর পড়াশোনা করবে না। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজও কিছু একটা করতে হবে। কাজ না করলে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না, বুঝলে তো?’
‘তাইলে কাম দ্যান মামা। খালি রেশকা চালান বাদে। ওই কামে আমি আর নাই।’
চঞ্চল কালামকে পড়ার টেবিল কেনার জন্য টাকা দিল। কালাম একটি টেবিল কিনে আনল। পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক, খাতা-কলম-পেনসিল-ইরেজার-জ্যামিতি বক্স ইত্যাদি কিনে আনল চঞ্চল নিজে। সন্ধ্যাবেলার আড্ডাগুলো বিসর্জন দিল সে। এখন সে অফিস শেষ করেই সোজা বাসায় ফিরে আসে। কালামকে নিয়ে বসে পড়ার টেবিলে।
এগার. ‘মামা, কম্পিউটার শিখন যায় কেমনে?’
‘খুব সোজা। কম্পিউটার হচ্ছে সবচেয়ে ইউজারফ্রেন্ডলি ডিভাইস।’
‘মানে?’
‘মানে, এই যন্ত্র নিজেই বলে দেয় একে কীভাবে চালাতে হবে।’
‘তাই নাকি? কেমনে কয়?’
‘সে জন্য তোমাকে ইংলিশটা আরও ভালো করে শিখে নিতে হবে, যেন তুমি পড়ে বুঝতে পার, কম্পিউটার তোমাকে কখন কী করতে বলছে।’
‘তাইলে আগে ইংলিশ, মামা! বাংলা কয়দিন বাদ থাউক। খালি ইংলিশ, ওকে?’
বারো. চঞ্চল অফিসে যাওয়ার সময় এখন আর তার শোবার ঘরের দরজা লক করে না, যেন কালাম চঞ্চলের ডেস্কটপটির বোতামগুলো টেপাটিপি করে কিছু শিখতে পারে। চঞ্চলের ডেস্কটপে ইন্টারনেট সংযোগ আছে। কালাম গুগলসার্চে লিখল এসইএক্স। কিন্তু মনিটরে কোনো মেয়েমানুষের খোলামেলা ছবি ভেসে উঠল না দেখে হতাশ হলো। এবার সে লিখল এফএকে। মনিটর এবারও হতাশ করল তাকে। এবার লিখল জিএআরএল। এবার মনিটর দেখে কালামের মেজাজ খিঁচড়ে গেল। সে কম্পিউটার বন্ধ করে নিজের খাটে এসে ডিভিডিতে দেখা শুরু করল জেরিন খানকে। প্রিয়াংকা চোপড়ার চেয়ে এই মেয়েটিকে এখন তার বেশি ভালো লাগছে।
তের. ‘ছার, কাল্লু তো..’
‘কাল্লু না, ওর নাম কালাম।’
‘হে তো পোলাপান নিয়া আপনের বাসায় আড্ডাউড্ডা মারে।’
সকাল ১০টায় অফিসের উদ্দেশে বেরিয়ে যাওয়ার সময় চঞ্চলের সঙ্গে বাড়ির দারোয়ানের সঙ্গে সংলাপ।
‘আপনে অখন অফিস যাইতাছেন। ইট্টু পরেই হের দোস্তরা আইব। আপনে হেগো চিনেননি ছার?’
চঞ্চল দারোয়ানের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বাসায় ফিরে এল। কলবেল চাপতেই ভেতর থেকে গান গাইতে গাইতে দরজার দিকে এগিয়ে এল কালাম। দরজা খুলতেই তার গান গেল থেমে। চঞ্চল বাসার ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
‘আমি অফিসে চলে গেলে বাসায় কারা আসে?’
‘ভালা পোলাপান মামা, আমার দোস্ত।’
‘প্রতিদিন আসে?’
‘না মামা। মাঝেমদ্দে।’
‘কী করে ওরা? থাকে কোথায়?’
‘এই তো, বউবাজারে থাহে, ভালা পোলাপান মামা। ইস্কুল-কলেজে পড়ে।’
‘আমাকে বলনি কেন?’
‘হেরা তো ডেলি ডেলি আহে না মামা। আইলেও বেশিক্ষণ থাহে না।’
‘কেন আসে? এসে কী করে?’
‘এই ইট্টু গপসপ করি মামা, দোস্ত না?’
‘কিন্তু আমাকে জানানো কি উচিত ছিল না তোমার?’
‘বুজি নাই মামা।’
‘ওদের আসতে নিষেধ করে দিয়ো, কেমন?’
‘জে মামা।’
চৌদ্দ. চঞ্চল অফিসে চলে যাওয়ার পরেই তিনটি ছেলে আসে। কালাম তাদের সঙ্গে প্রিয়াংকা চোপড়া, দীপিকা পাড়ুকোন, জেরিন খান, কারিনা কাপুরকে দেখে। সিগারেট ও গাঁজা খায়। তারপর দুপুরবেলা খিদে পেলে ফ্রিজ থেকে সব খাবার বের করে চেটেপুটে খেয়ে মড়ার মতো ঘুমায় সন্ধ্যা পর্যন্ত। চঞ্চল সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে বাসায় ঢোকার সময় দারোয়ানের কাছে জানতে পারে, ছেলেগুলো একটু আগেই বেরিয়ে গেল।
‘কালাম!’
‘জে মামা।’
‘তোমার দোস্তরা আজও এসেছিল?’
‘জে না মামা।’
‘মিথ্যা বলবে না, কেমন?’
‘মিছা না মামা। দারোয়ান হালায় আমারে দেখবার পারে না, আপনেরে আমার নামে মিছা কতা লাগায়।’
‘তুমি মিথ্যা বলছ না? আমার দিকে তাকাও!’
কালাম মাথা নিচু করে থাকে।
‘আমার দিকে তাকাও। কালাম! চোখ লাল কেন তোমার?
ঘরের বাতাসে গাঁজার গন্ধ, চঞ্চল গাঁজা চেনে।
‘কালাম, গাঁজা খেয়েছিস?’
‘না মামা, খোদার কসম!’
‘কাল্লু! মিথ্যাবাদী, বদমাশ! বেরো, বেরো আমার বাসা থেকে!’
‘কই যামু?’
‘জাহান্নামে যাবি। এক্ষুনি বের হ খবিস!’
‘আমার লেখাপড়া?’
‘আবার লেখাপড়া! বেরিয়ে যা বলছি!’
‘আমার খাট?’
‘কাল সকালে এসে নিয়ে যাবি তোর খাট!’
‘সত্যই চইল্যা যাইতে কইতাছেন আমারে?’
‘আর একটাও কথা না। এক্ষুনি বেরিয়ে যা ইতর কোথাকার!’
কালাম বেরিয়ে যাওয়ার সময় দারোয়ানকে বলে, ‘হালার পুত, তর ছার আমারে থাকতে দিছিল ক্যান জানস? আমার হোগা মারতে। তিন মাস বহুত চেষ্টা করছে। আমি দেই নাই। তাই খেদায়া দিতাছে।’
পনের. ছয় মাস পর। বিজয় সরণিতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল চঞ্চলের সিএনজি। ঝট করে দুজন উঠে বসল তার দুই পাশে। একজন চিৎকার করে উঠল: ‘ওরে! এইডা তো মাম্মু চে!’
মানিব্যাগ, ঘড়ি, মোবাইল ফোন নিজেই দিয়ে দিল মামা। ভাগিনারা মলমের কৌটা খুলল।
‘কাল্লু, প্লিজ, এই সর্বনাশটা কোরো না আমার!’
‘এইডা মাপ নাই মামা! মলম দিতেই হইব!’
‘কালাম, প্লিজ!’
‘না মামু, না! মলম না দিলে হইতই না!’
চঞ্চলের দেহটা ধপাস শব্দে পড়ল রাস্তার ওপর। চিৎকার করতে করতে চলে গেল সিএনজি।
চঞ্চল এখন রাস্তায় কুণ্ডলী পাকিয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
‘ওহ্ গড! লুম্পেনটা ক্রিমিন্যাল হয়ে গেছে!’
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৩, ২০১১
পাঠক
দারুণ । এটিই বাস্তবতা “মামা ‘চে'” !
Al Noman
বাস্তবতা ।
sajib5516
এটিই বাস্তব,
প্রশ্রয় দেয়া ঠিক নয়