ভক্তির দ্বারা বান্ধা আছে সাঁই। হিন্দু কি যবন বলে জেতের বিচার নাই।। শ্রদ্ধ ভক্তি মাতোয়ালা ভক্ত কবির জেতে জোলা ধরেছে সে ব্রজের কালা তার সর্বস্ব তাই।। রামদাস মুচি ভবের মাঝে ভক্তির বল সদায় তার যে সে তার সেবার স্বর্গে ঘণ্টা বাজে শুনি সাধুর ঠাঁই।। এক চাঁদে জগৎ আলো এক বীজে সব জন্ম হল লালন বলে, মিছে কলহ ভবে শুনিতে পাই।।
——————-
লালন ফকির : কবি ও কাব্য, পৃষ্ঠা ১৪৩; লালন-গীতিকা, পৃষ্ঠা ৩৭
‘বাংলার বাউল ও বাউল গানে’ পঙক্তি ও চরণ বিন্যাসে পার্থক্য আছে। গানটি সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া হল :
ভক্তির দ্বারে বাঁধা আছেন সাঁই। হিন্দু কি যবন বলে তাঁর কাছে জাতের বিচার নাই।। ভক্ত কবির জেতে জোলা প্রেম-ভক্তিতে মাতোয়ালা ধরেছে সেই ব্রজের কালা দিয়ে সর্বস্ব ধন তাই।। রামদাস মুচি এই ভবের 'পরে পেলো রতন ভক্তির জোরে তার স্বর্গে সদাই ঘণ্টা পড়ে সাধুর মুখে শুনতে পাই।। এক চাঁদে হয় জগৎ আলো এক বীজে সব জন্ম হল ফকির লালন কয়, মিছে কলহ কেন করিস সদাই।।
–ঐ, পৃষ্ঠা ৮২
‘বাউল কবি লালন শাহ’ গ্রন্থের পাঠটি উপরের পাঠের সাথে মিল আছে। সঞ্চারীর ৪র্থ চরণটি “সাধু শাস্ত্রে শুনতে পাই”-এরূপ কথান্তর আছে। পৃষ্ঠা ১৫১, ২৭৯
‘হারামণি’ ৭ম খণ্ডে গানটি খুবই বিকৃত আকারে সংকলিত হয়েছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ সঞ্চারী স্তবকটি এখানে তুলে দেওয়া হল :
মুচিরাম ভবের পরে সদাই ভক্তি সেই করেছে ও তার সেবাই স্বর্গে ঘণ্টা পড়ে শুধু প্রেম ভক্তির বলে।।
— পৃষ্ঠা ৪১৩
এ ধরনের পাঠ গ্রহণযোগ্য নয়।
লালন হিন্দু-মুসলমানের ভেদ মানতেন না; জাত-পাতের বিচার করতেন না। কবির ও রামদাস অনুরূপ জাত-বিচার করতে না। লালন একাধিক গানে কবির ও রামদাসের প্রসঙ্গ এনেছেন। কবির জাতিতে মুসলমান ও পেশায় জোলা ছিলেন। রামদাস জাতিতে হিন্দু ও পেশায় মুচি ছিলেন। তাঁরা উভয়ে আধ্যাত্মিক প্রেম-ভক্তিবাদ প্রচার করেন।
Leave a Reply