কোন রসে কোন রতির খেলা।
জানতে হয় এই বেলা।।
সাড়ে তিন রতি বটে
লেখা যায় শাস্ত্রপাটে
সাধ্যের মূল তিন রস ঘটে
তিনশ’ ষাট রসের বালা।
জানলে সে রসের মরম
রসিক তারে যায় বলা।।
তিন রস সাড়ে তিন রতি
বিভাগে করে স্থিতি
গুরুর ঠাঁই জেনে পাতি
শাসন করে নিরালা।
তার মানব জনম সফল হবে
এড়াতে শমন-জ্বালা।
রস-রতির নাই বিচক্ষণ
আন্দাজে করি সাধন
কিসে হয় প্রাপ্ত কি ধন
ঘোচে না মনের ঘোলা।
আমি উজায় কি ভেটেন১ পড়ি
ত্রিপীনির তীর নালা।।
শুদ্ধ প্রেম-রসিক হলে
রস-রতি উজান চলে
ভিয়ানে সদ্য ফলে
অমৃত মিছরি ওলা
লালন বলে, আমার কেবল
শুধুই জল তোলা-ফেলা।।
লালন ফকিরঃ কবি ও কাব্য, পৃ. ২০২-০৩
‘লালন-গীতিকা’য় অন্তরা-সঞ্চারীর স্থান বদল হয়েছে। এ ছাড়াও কিছু পাঠভেদ আছে। কয়েকটি চরণ এভাবে লেখা হয়েছেঃ
১. মধ্যের মূল তিন রস বটে
২. জানলে সে রসের মরম/রসে কি তারে যায় বলা। (এ পাঠটি শুদ্ধ নয়)
৩. রসবতীর ন্যায় বিচক্ষণ
রসবতী উজান চলে/ ভেয়ানে শুদ্ধ ফলে/অমৃত মিছরী উলা।- পৃ. ৪৭
১ উজান-ভেটেন – বাউলের দেহতত্ত্বে জোয়ার-ভাটার রূপক আছে। বিশেষ করে তান্ত্রিক যোগ সাধনায় এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ সম্পর্কে সিরাজুদ্দিন কাসিমপুরী বলেন, “উজান’ শব্দের অর্থ রতিক্রিয়ার সময় বীর্যের ঊর্ধগমন ক্রিয়ার অভ্যাস গঠন। এই অভ্যাস বদ্ধমূল হইলে সাধনায় সিদ্ধি লাভ হইয়া থাকে। ইহাতে শারীরিক ও মানসিক শক্তি খুব বৃদ্ধি পাইয়া মানুষকে দান করে পূর্ণ মানুষ হওয়ার শক্তি সামর্থ্য। ‘ভেটেল’- এই পথে বা ক্রিয়ায় বীর্যপাত হয়, সন্তান জন্মে, সিদ্ধি হয় না, অর্থাত্ ঊর্ধরেতা হওয়া যায় না। সিদ্ধ গুরুর নিকট এই ‘উজান-ভেটেল’ সাধন প্রক্রিয়া শিক্ষা করিতে হয়।” – বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত পরিচিতি, পৃ. ৪৪৫
বিপ্লব
আনেক ভালো এই সাইটা…