ছবি মিথ্যে বলে না
সোহরাব হাসান
একাত্তর: বিজয়ের সেই ক্ষণ—সি এম তারেক রেজা \
ফেব্রুয়ারি ২০১১ \ নিমফিয়া পাবলিকেশন্স \ ২০৩ পৃষ্ঠা \ মূল্য: ১২০০ টাকা
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে যদি তুলনা করা হয় মহাকাব্যের সঙ্গে, তাহলে এখনো অনেক পঙিক্ত আমাদের অপঠিত রয়ে গেছে। যদি তুলনা করা হয় মহাসমুদ্রের সঙ্গে, তার সামান্য অংশই স্পর্শ করা গেছে। যাঁরা গবেষক, পণ্ডিত, অনুসন্ধিৎ সু মানুষ, তাঁদের নিরন্তর সাধনা ও শ্রমে নতুন নতুন তথ্য বের হয়ে আসছে। একটি জাতির নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের রয়েছে বিভিন্ন দীর্ঘ পটভূমি ও শুরু, রয়েছে স্তর ও পরিণতি, রয়েছে চূড়ান্ত বিজয়। এসব একক ব্যক্তির পক্ষে ধারণ করা সম্ভব না হলেও কোনো কোনো দুঃসাহসী মানুষ সেই চেষ্টাও করেছেন। তাঁদেরই একজন চৌধুরী মোহাম্মদ তারেক রেজা বা সি এম রেজা (১৯৬২-২০০০)। তাঁর প্রথম প্রকাশনা একুশ-এ বিধৃত হয়েছে ভাষা আন্দোলনের সচিত্র ইতিহাস, কথা ও ছবির বিন্যাস। তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন বিজয় কেতন ও সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা নামে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে আমাদের মহান স্বাধীনতাসংগ্রামের সব প্রয়াসেই নিজেকে যুক্ত রেখেছেন তিনি। এই নিরলস কর্মীর শেষ প্রয়াস একাত্তর: বিজয়ের সেই ক্ষণ। দুর্ভাগ্য, প্রকাশনাটি তিনি দেখে যেতে পারেননি; যখন অ্যালবামের কাজ চূড়ান্ত করে এনেছেন, তখনই তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। মৃত্যুর এক দিন আগে সি এম রেজা এই কর্মভার তুলে দেন নিমফিয়া পাবলিকেশন্সের হাতে।
বইয়ের সূচি দেখলেই বোঝা যাবে, এটি কত বড় কর্মযজ্ঞ। চূড়ান্ত যুদ্ধ ও বিজয় বলতে তিনি ১৯৭১ সালের ৩ থেকে ১৬ ডিসেম্বরকে চিহ্নিত করেছেন। এরপর পর্যায়ক্রমে আছে সচিত্র যুদ্ধ, বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের দৃশ্য।
সবশেষে বিজয়ের উল্লাস—৫ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১।
বইয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সন্নিবেশিত হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ক্যামেরায় ধারণকারী দেশি-বিদেশি আলোকচিত্রীদের পরিচিতি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা ছবি তুলেছেন, তাঁরাও মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ ক্ষেত্রে তাঁদের ব্যব্যহূত ক্যামেরার সঙ্গেও পাঠকের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী এই কৃতী গবেষক।
ছবি কখনো মিথ্যে বলে না। সি এম তারেক রেজা প্রণীত একাত্তর: বিজয়ের সেই ক্ষণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনন্য দলিল ও সম্পদ হয়ে থাকবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে।
এ রকম একটি চমৎ কার প্রকাশনার জন্য নিমফিয়া পাবলিকেশন্স অবশ্যই ধন্যবাদ পেতে পারে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০১০
Leave a Reply