ফ্রেমের সামনে দাঁড়াতেই দর্পণে নিজের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। কাচের গায়ে কাচ জোড়া দিয়ে কাজী রকিব তৈরি করেন স্থাপনাশিল্পের আদলে শিল্পকর্ম। বর্গাকৃতির কাচের গায়ে আঁচড় কেটে তৈরি করেছেন বৃষ্টির অবয়ব। প্রথাগত রং লেপনের প্রক্রিয়ার বাইরে নতুন শিল্পভাষা নির্মাণ আমাদের শিল্পে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। শিল্পচর্চায় নিবিড় মনোযোগী হয়ে কাজ করছেন এবং সৃষ্টিকর্মে বৈচিত্র্যপূর্ণ নিরীক্ষায় সফল যাঁরা, তাঁদের কাজের অষ্টম আয়োজন সৃজনে ও শেকড়ে শুরু হয়েছে গত ৪ জানুয়ারি বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে। ১০ জন শিল্পীর ৪০টি শিল্পকর্ম নিয়ে স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।
সত্তর এবং আশির দশকের শিল্পীদের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটেছে নব্বই ও শূন্য দশকের শিল্পীদের এ প্রদর্শনীতে। আমাদের সমৃদ্ধ লোকঐতিহ্য, প্রকৃতি, মানুষ ও মানুষী জীবনযাত্রার নানা ঘটনাপ্রবাহকে বিষয় করে শিল্পীরা ছবি এঁকেছেন। প্রদর্শনীর জ্যেষ্ঠ শিল্পী মোহাম্মদ মোহসীন চারটি অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে আঁকা বিমূর্ত ছবিতে প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তনের মনোমুগ্ধকর রঙের উপস্থাপন করেছেন। শীতের ভোরের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালকে নীল ও সবুজাভ নীলের ব্যবহারে প্রকৃতির বিমূর্ততা প্রকাশ করেছেন ‘ইমেজ অব উইন্টার মরনিং’ ছবিতে। মোমিনুল ইসলাম রেজা ক্যানভাসে স্পর্শকাতর তিনটি রঙের ব্যবহার করেছেন। সবুজ, লাল ও নীল এই তিনের ব্যবহার রঙের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এনেছে। লাল জমিনে কালো চতুর্ভুজের উপস্থাপন সবুজের মাঝে অপেক্ষাকৃত কম লালের ব্যবহার দৃষ্টিকে বন্দী করে এক কেন্দ্রে। প্রথাবিরুদ্ধ সৌন্দর্য নির্মাণ মোমিনুলের কাজের বৈশিষ্ট্য। কাগজের গায়ে খোদাই চিত্রের আদল তৈরি, বিন্দুর পাশে বিন্দুর গড়ন মোহাম্মদ ফকরুল ইসলামের শিল্পভাষা। নতুন ভাবনা ও কৌশলকে প্রয়োগ করে নিবিড়ভাবে সৃষ্টি করেন শিল্পকর্ম। সেপিয়া ও ধূসর কালো রঙের কাগজের গায়ে তেল প্রয়োগের পর সুচালো উপকরণের সাহায্যে বিন্দু সৃষ্টি করে কখনো বৃত্তাকার, চৌকোনা, বর্গাকৃতির ক্যানভাস সৃষ্টি করেন শিল্পী। প্রদর্শনীর সর্বকনিষ্ঠ শিল্পী মাকসুদা ইকবাল। মৌলিক রঙের ওপর স্তরে স্তরে রঙ চড়িয়ে বুনট সৃষ্টি করেছেন ‘সারফেস’ শিরোনামের ক্যানভাসগুলোতে। যা প্রকৃতিতে ছড়ানো রঙের বিন্যাসকে ব্যক্ত করে। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া ১০ জন শিল্পী মোহাম্মদ মোহসীন, ইফফাত আরা দেওয়ান, মোমিনুল ইসলাম রেজা, কাজী রকিব, ফারেছা জেবা, মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম, লায়লা শারমিন, শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, আনিসুজ্জামান, মাকসুদা ইকবাল নীপা। প্রদর্শনীটি শেষ হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১১, ২০১০
Leave a Reply