গিন্সবার্গ ও জ্যাক কেরুয়াক
মার্কিন কবি জ্যাক কেরুয়াক এবং অ্যালেন গিন্সবার্গ পরস্পরকে বেশ কিছু চিঠি লিখেছিলেন। তাতে একে অন্যের কবিতার প্রশংসা যেমন করেছেন তেমনি মুণ্ডপাত করতেও ছাড়েননি। দুর্লভ চিঠিগুলো নিয়ে বেরিয়েছে জ্যাক কেরুয়াক অ্যান্ড অ্যালেন গিন্সবার্গ: দি লেটার্স। বইটি নিয়ে ৬ আগস্ট নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় লিখেছেন ব্লেইক বেইলি। এর নির্বাচিত অংশ অনুবাদ করেছেন সারফুদ্দিন আহমেদ
শুরুর দিকে উইলিয়াম এস বারোস, নিল ক্যাসাডি, গ্রেগরি কোরসো এবং বিশেষ করে অ্যালেন গিন্সবার্গসহ ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধুবান্ধব ছাড়া জ্যাক কেরুয়াকের কবিতার প্রশংসাকারী তেমন কেউ ছিল না। এ কয়জনই তাঁকে উত্সাহ উদ্দীপনা দিতেন। গিন্সবার্গ তো নিজেকে কেরুয়াকের ছোট ভাই বলে পরিচয় দিতেন। কাব্যচর্চার ক্ষেত্রে পরামর্শ, প্রেরণা ও উত্সাহ দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা পরস্পরের প্রতি যে কতটা নির্ভরশীল ছিলেন তা জ্যাক কেরুয়াক অ্যান্ড অ্যালেন গিন্সবার্গ: দি লেটার্স বইটি পড়ার পর আরও বেশি পরিষ্কার হয়েছে। তাঁদের মধ্যকার পারস্পরিক বোঝাবুঝি যে এত সহজ ও স্বচ্ছন্দ ছিল, এর মাধ্যমে সেটা প্রকাশিত হয়েছে। যে কবিতার জন্য গিন্সবার্গ রাতারাতি বিশ্বখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন সেই ‘হাউল’ (১৯৫৬ সাল) প্রকাশিত হওয়ার অনেক আগেই কেরুয়াক ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন, তাঁর বন্ধুদের মধ্য থেকে কেউ একজন ‘ইহুদিদের জাতীয় বীর’ হতে চলেছেন। সেই ‘কেউ একজনের’ পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ইহুদিরা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আইনস্টাইনকে নিয়ে যেভাবে গর্ব করে, কবিতার দিক থেকে তারা তেমনিভাবে গিন্সবার্গকে নিয়ে গর্ব করবে।’ কেরুয়াকের ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে।
জ্যাক কেরুয়াক নিজের কবিতা নিয়ে অনেক উঁচু ধারণা পোষণ করলেও প্রথমদিকে গিন্সবার্গ তাঁকে খুব একটা পাত্তা দেননি। ১৯৫৫ সালে কেরুয়াককে লেখা এক চিঠিতে গিন্সবার্গ বলেন, ‘দেরিতে হলেও স্বীকার করছি, তুমি আমার চেয়েও ভালো লিখছ।’ গিন্সবার্গ এ চিঠি লেখার আড়াই বছর আগে কেরুয়াকের সুদীর্ঘ ও মহাকাব্যিক ঘরানার কবিতা ‘অন দ্য রোড’কে ‘কোনোরকমে উতরে যাওয়ার মতো’ সৃষ্টি বলায় দুজনের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব বাধে। কেরুয়াক এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি সে সময় গিন্সবার্গকে লিখেছিলেন, ‘তুমি কি মনে করো—তুমি, হোমস ও সলোমন (জন ক্লেলন হোমস ও কার্ল সলোমন দুজনই গিন্সবার্গ ও কেরুয়াকের ঘনিষ্ঠ কবিবন্ধু ছিলেন) আমাকে কতটা ঈর্ষা করো—আমি তা বুঝি না? ক্ষমতা থাকে তো তোমরা সবাই একসঙ্গে চেষ্টা করে এ রকম একটা কবিতা লিখে দেখিয়ে যেয়ো।’
ওই চিঠিতে কেরুয়াক গিন্সবার্গকে ঘুষি পর্যন্ত মারতে চেয়েছিলেন। যা-ই হোক, বাকি জীবনে কেরুয়াককে আর ঘাঁটাতে যাননি গিন্সবার্গ।
তবে কেরুয়াকের ‘অন দ্য রোড’ কবিতা সম্পর্কে গিন্সবার্গের ভবিষ্যদ্বাণী খুব মিথ্যে ছিল না। এ কবিতাটির ভাগ্যে খুব একটা প্রশংসা জোটেনি। কেরুয়াক ১২০ ফুট লম্বা একটা ট্রেসিং পেপারে তাঁর টাইপরাইটারে টাইপ করে কবিতাটি লিখেছিলেন বলে সমালোচক ট্রুম্যান ক্যাপোটি এ কবিতা সম্পর্কে তির্যক মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘ওটা রাইটিং ছিল না, ওটা ছিল টাইপিং।’ তবে কেরুয়াক এসব মন্তব্যের ধার ধারেননি। এক চিঠিতে তিনি গিন্সবার্গকে বলেছেন, ‘তোমাকে প্রথমে তোমার নিজের মনকে বিশুদ্ধ করতে হবে। বিশুদ্ধ মন থেকে যে ভাবনার উদ্রেক হবে, হাতের অক্ষরে সে ভাবনাটাই খাতায় ঢেলে দিয়ো।’
জ্যাক কেরুয়াক অ্যান্ড অ্যালেন গিন্সবার্গ: দ্য লেটার্স—সম্পাদনা: বিল মর্গান ও ডেভিড স্ট্যানফোর্ড, ভাইকিং, ৩৫ মার্কিন ডলার।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৩, ২০১০
Leave a Reply