খররৌদ্রময় এই দিন—
শ্যামল বাংলায় বুঝি ফের নেমে আসে খরা!
খরতাপে রুদ্ধশ্বাসক্ষুদ্র এই গ্রামীণ শহর,
এ রকম এই দিনে চেতনায়ও খরার প্রদাহ—
নির্বাচনে হেরে-যাওয়া প্রার্থী যেন: বিরক্ত, বিব্রত;
এ রকম দুঃসময়ে এল বৃষ্টির শব্দের মতো
সুখকর এই পত্র—প্রাগের প্রাচীর থেকে উড়ে!
কুপিত, বিব্রতকর এই রোদে খামটি খুলিনি;
আমি তো অপেক্ষা জানি: এই খররৌদ্রে কখনো কি
প্রিয় বান্ধবীর লেখা চিঠি খোলা চলে?
অতএব, রেখে দিই যত্ন করে নিজস্ব ড্রয়ারে!
১১ জুলাই রাতে অকস্মাৎ বৃষ্টি নেমে এল
যেন দীর্ঘদিন পর হঠাৎ হারিয়ে-যাওয়া আমার সন্তান
ঘরে ফিরে এল।
বাইরে এখন বৃষ্টি,
বৃষ্টির স্নিগ্ধতা বহু দিন পর যেন
আমার হূদয়ে প্রীত মধ্যযুগ ভরে দিয়ে গেল!
এখনো বাইরে বৃষ্টি: জানালায় জলের প্রপাত—
এই বুঝি প্রকৃষ্ট সময় যখন প্রশান্ত মন,
হূদয়ে যখন আর খেদ নেই কোনো, ভারাতুর
নয় আর মন, ক্রোধ নেই, ঘৃণা নেই—অবিশ্বাস্য
শান্তিপ্রিয় আজ এই মাঞ্চুরীয় রাখাল বালক;
হূদয়ে কোনোই শোক নেই—শোকানুভূতিও নেই—
অসম্ভব শান্ত আজ—সমাহিত—আমার হূদয়!
নষ্ট করে ফেলে-দেয়া জীবনের জন্য নেই কোনো
শোচনা ও তাপ;—বৃষ্টির সৌগন্ধে ভরে আছে মন!
মনে হচ্ছে আমার মতন সুখী কেউ নেই আর
পৃথিবীর কোনো প্রান্তে ১১ জুলাই এই রাতে!
২.
এখন আপনার চিঠি খোলা যায় এই পরিবেশে:
এ কী করেছেন! খামে ভরে কেউ কারুকে পাঠায়
গোবি-সাহারার দীর্ঘ হাহাকার, চীনের প্রাচীর?
স্তব্ধ হয়ে থাকি চিঠি পড়ে: সারাটা দুনিয়া জুড়ে
মানুষের এত দুঃখ—এর থেকে পরিত্রাণ নেই?
—বৃষ্টির প্রপাত শুনে, গাছের সবুজে চোখ রেখে
শিশুদের গালে চুমো খেয়ে আমরা পারি না ফের
এই দুঃখী গ্রহটির অন্তর্গত অসুখ সারাতে?
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৬, ২০১০
Leave a Reply