রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটা ভেবে আমার খুব সুখ হয় যে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আমাকে কখনো আকর্ষণ করেনি, যেমন করেনি নজরুলের কবিতা। আজ মনে হয়, খুব ভালো করে আমার মনে হয়, কবিতায় রবীন্দ্রনাথের অপচয় বিপুল, শামসুর রাহমানও অত অপচয় করেননি। এটা অবশ্য বিপুল রচনারই নিয়তি। তবে বড় কবিদের অপচয়ও বেশ মূল্যবান। কেননা, তাঁদের কাছ থেকে শেখার রয়েছে অনেক কিছুই। রবীন্দ্রনাথের কাছে যেমন শেখার আছে ভাষার আড়ষ্টতা কীভাবে কাটিয়ে উঠতে হয়; ছন্দের নিরীক্ষা, শব্দের ঐশ্বর্যের সঙ্গে প্রাত্যহিকতার মেলবন্ধন কেমন করে সম্ভব ইত্যাদি। এসব অবশ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে সাহিত্যের প্রাথমিক অবস্থায়। রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব এ জায়গাতেই।
তিনটি উপাধি নিয়তির মতো জড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের সঙ্গে—‘বিশ্বকবি’, ‘কবিগুরু’ ও ‘চিরআধুনিক’। কবিদের নামের সঙ্গে উপাধি জুড়ে দেওয়া বাঙালি মধ্যবিত্তের ধর্ম। মনে হতে পারে, আবেগের আতিশয্যে এমনটি ঘটেছে; কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে কপটতা ও চালাকি। বিহারীলাল চক্রবর্তী, যাঁকে গুরু মেনেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তাঁর জন্যেও বরাদ্দ হয়েছে একটি উপাধি—‘ভোরের পাখি’। নজরুলের জন্যে যেমন নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিদ্রোহী কবি’, ‘সাম্যের কবি’ আখ্যা। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের প্রতি বাঙালির আবেগ যত সরল মনেই হোক না কেন, একটু ভেবে নিলে এর মধ্যে যে কপটতা রয়েছে, তা টের পাওয়া যায়। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগে সাহিত্যে তো বটেই, শিক্ষিত সমাজেও রবীন্দ্রনাথ লক্ষণীয়ভাবে স্বীকৃত ছিলেন না। নোবেল পাওয়ার পর যাঁরা ছিলেন তাঁর কবিতার কঠোর সমালোচক, তাঁরাও ভোল পাল্টে ফেলেন। তিনি রাতারাতি হয়ে ওঠেন বিখ্যাত ও জনপ্রিয়, বাঙালি তাঁর জন্যে বরাদ্দ করে একটি উপাধি—‘বিশ্বকবি’। এর মধ্য দিয়ে তারা প্রচার করে যে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম কবি, কেননা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি তিনি পেয়েছেন। বাঙালির কপটতার সম্ভবত সবচেয়ে বড় শিকার রবীন্দ্রনাথ। অবশ্য এর আগে পাশ্চাত্য তাঁকে শিকার করে ছেড়ে দিয়েছে কলকাতার মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজে; তারা তা করেছে বুঝেশুনে আর বাঙালি একই কাজ করেছে নির্বোধের মতো, বছরের পর বছর ধরে। ‘বিশ্বকবি’ উপাধি দেওয়ার আগে বিশ্বের তো বটেই, ইংরেজি কবিতাই তারা ঠিকমতো পড়েনি; হয়তো ভালো করে পড়েননি রবীন্দ্রনাথও। আখ্যাটির উৎস নোবেল পুরস্কার; কিন্তু গীতাঞ্জলি (১৯১০) নামের যে কাব্যগ্রন্থের জন্যে (রবীন্দ্রনাথ নোবেল পান মূলত গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ সঙস অফারিঙ্স্-এর জন্যে, যাতে যোগ হয়েছিল তাঁর আরও কিছু কবিতার অনুবাদ) এই অর্জন, তা বাঙালি হয়তো ভালো করে পড়েনি; পড়লেও প্রকাশ করেনি বা এড়িয়ে গেছে যে এটি ধারণ করে আছে কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদতা। এর বেশ কটি কবিতায় প্রাধান্য পেয়েছে প্রভু, দেবতা আর প্রার্থনার প্রসঙ্গ। একেবারেই ভক্তিমূলক রচনা এগুলো, মনে হয় কবির কোনো কাজ নেই প্রভু কিংবা দেবতার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে মগ্ন ও আচ্ছন্ন হওয়া ছাড়া। গীতাঞ্জলির ‘প্রতিসৃষ্টি’ কবিতায় তিনি লিখেছেন:
‘হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহপ্রাণ
কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান!
আমার নয়নে তোমার বিশ্বছবি
দেখিয়া লইতে সাধ যায় তব কবি—
আমার মুগ্ধ শ্রবণে নীরব রহি
শুনিয়া লইতে চাহ আপনার গান \’
‘কবিগুরু’ উপাধির আগে বাঙালি ভেবে দেখেনি যে কবিদের কোনো গুরু নেই, হয় না। কবির কোনো প্রতিপক্ষও নেই প্রথাগত ভাষা ও চেতনা ছাড়া। সাহিত্যে গুরুর ধারণা চলে না, কেননা, তাতে শিষ্য বা ভক্তের উপস্থিতি অনিবার্য হয়ে পড়ে। শিষ্যের কাজ গুরুর প্রশংসায় জীবন পার করে দেওয়া; এখানে প্রশ্নের কোনো সুযোগ নেই। গুরু-শিষ্যে সাহিত্য হয় না; রাজনৈতিক স্বার্থে কোনো কবির ওপর গুরুর ভাবমূর্তি আরোপ করা গেলেও সেই ভাবমূর্তিতে সাহিত্যের কিছু যায়-আসে না। গুরুর স্থান সাহিত্যে নেই, ফলে শিষ্যেরও নেই: বিশ শতকের দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ দশকজুড়ে যে বিপুল রবীন্দ্রশিষ্যের উত্থান ঘটেছিল বাংলা কবিতায়, তাঁদের প্রত্যেকেরই মৃত্যু ঘটেছে জীবদ্দশাতেই। তত দিন তাঁরা বেঁচেছিলেন, যত দিন বেঁচেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কবি হিসেবে জীবদ্দশাতেই, হায়, তাঁরও ঘটেছে মৃত্যু। এর কারণ ভাষার গতিশীলতা, চেতনার পরিবর্তন। এই চেতনাবদল ঘটে বিশ শতকের চতুর্থ দশকে; সে হিসেবে কবি রবীন্দ্রনাথ বেঁচে ছিলেন, মানসীর প্রকাশবছর ১৮৯০ থেকে জীবনানন্দ দাশের ধূসর পাণ্ডুলিপির প্রকাশবছর ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ধরলে, ৪৬ বছর; সাহিত্যের ইতিহাসে এটি কম সময় নয়, যদি সেই ইতিহাস খুব দীর্ঘ না হয়। কিন্তু দিকে-দিকে আজও দেখা যায় রবীন্দ্রমন্দিরের পুরোহিতদের; দেখে মনে হয় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস খুব ছোট, হয়তো দেড় শ বছরের কিছু কম হবে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই রবীন্দ্রমন্দিরের পুরোহিত, রবীন্দ্রনাথ নিয়ে তাঁদের আতিশয্যের শেষ নেই।
‘চিরআধুনিক’ উপাধিটি রবীন্দ্রনাথের প্রতি বাঙালির কপটতার খুব সুন্দর উদাহরণ। শব্দটির স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথই, তবে বাঙালি তা আবিষ্কার ও ব্যবহার করেছে তাঁকে প্রশ্নোর্ধ্ব উচ্চতায় তুলে রাখার জন্য। ‘আধুনিক’ শব্দটি সুখকর একটা মোহ জাগিয়েছিল বিশ শতকের শুরুতে, বাঙালি এর অর্থ পুরোপুরি বুঝতে পেরেছিল বিশ শতকের তৃতীয় দশকে; কবিতায় তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে জীবনানন্দ দাশের ধূসর পাণ্ডুলিপি প্রকাশের মধ্য দিয়ে। রবীন্দ্রনাথের পত্রপুট ও শ্যামলী একই বছর প্রকাশিত হয়; এ-দুটোর কোনোটিই আধুনিক নয়। দুটি কাব্যেই রোম্যান্টিকতা ও মরমিপনা জড়াজড়ি করে আছে। অধিকন্তু, এই তিনটি বই পাশাপাশি রেখে পড়লে খুব নিরীহ মনে হয় রবীন্দ্রনাথকে। যাই হোক, আধুনিক হওয়ার চেষ্টা দেখা যায় তাঁর অন্তিমপর্বের কবিতায় এবং তা সরল সংশয় আর অপরিণত ব্যক্তিক প্রকাশে ভেস্তে গেছে। তাঁকে ‘চিরআধুনিক’ আখ্যা দেওয়ার মূলে কাজ করেছে বাঙালি মধ্যবিত্তের আত্মপরিচয়ের রাজনীতি। বাঙালি মধ্যবিত্ত সব সময় চেয়েছে একটা সাংস্কৃতিক অবলম্বন, যা তার স্ট্যাটাস, আভিজাত্য, আধিপত্য, ব্যক্তি ও শ্রেণীস্বার্থের কাজে লাগতে পারে; সব সময়ের জন্যে যা ব্যবহারযোগ্য। মহাকাব্যের যুগ ফুরিয়ে গেছে বলে তারা ছুড়ে ফেলেছে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে; এখানেও রয়েছে কপটতা; কেবল সাহিত্যের ইতিহাস ও পাঠ্যসূচির সীমায় তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথকে সব সময়ের জন্য ব্যবহারযোগ্য মনে হয়েছে বাঙালির, নজরুলকেও; এই দুই কবির জন্ম না হলে হয়তো বিহারীলালকে বেছে নেওয়া হতো, জীবনানন্দকেও। যা-ই হোক, ‘চিরআধুনিক’ শুনতে খুব সুখকর, কিন্তু শিল্পকলায় কিছুই নেই চিরআধুনিক বলে; এটা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি ও বাঙালি মধ্যবিত্তের আবিষ্কার, যা তারা করেছে রবীন্দ্রনাথকে সব সময়ের জন্যে সবচেয়ে উঁচুতে রেখে আর সব শ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ কবিকে গৌণ করে রাখার উদ্দেশ্যেই। শিল্পকলায় ‘আধুনিক’ শব্দটি এক বিশেষ অর্থে ও তাৎপর্যে ব্যবহূত, হার্বার্ট রিড যার চিহ্নায়নে ‘ক্যাটাস্ট্রফি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। বাংলা ভাষায় এর প্রসারিত অনুবাদ হলো—‘বিপর্যয়কারী বহুমুখী চিন্তার জটিল প্রকাশ’। আরও প্রসারিত করলে এর মানে থেকে তিনটি প্রান্তের উন্মোচন ঘটে: আধুনিকতা হলো এমন চেতনা, যা প্রথমত বিপর্যয়কারী, দ্বিতীয়ত বহুমুখী এবং তৃতীয়ত জটিল। প্রথা ও সংস্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, প্রচলিত ধ্যান-ধারণায় আঘাত ইত্যাদি আধুনিকতার আসল লক্ষণ। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আছে কাতরতা, সারল্য আর একরৈখিকতা; প্রথা ও সংস্কারে বারবার তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন। রোম্যান্টিকেরাও তা করেন না, কিন্তু তাঁর পক্ষে এমনটি সম্ভব হয়েছে। বারবার তাঁর কবিতায় ঘুরেফিরে এসেছে ‘প্রভু’, ‘দেবতা’, ‘প্রার্থনা’, ‘পূজা’ ইত্যাদি অনুষঙ্গ। বক্তব্যটির সমর্থনে বহু দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে। তবে এখন পত্রপুট কাব্যের ‘পৃথিবী’ কবিতার একটা অংশ পড়ে নেওয়া যাক:
‘দেবতা এলেন পরযুগে, মন্ত্র পড়লেন দানবদমনের—
জড়ের ঔদ্ধত্য হল অভিভূত;
জীবধাত্রী বসলেন শ্যামল আস্তরণ পেতে।
উষা দাঁড়ালেন পূর্বাচলের শিখরচূড়ায়,
পশ্চিমসাগরতীরে সন্ধ্যা নামলেন মাথায় নিয়ে শান্তিঘট \’
কবিতাটিতে এমন এক ‘পৃথিবী’র বর্ণনা রয়েছে, যেখানে এর ‘ইতিহাসের আদিপর্বে দানবের প্রতাপ ছিল’; দেবতা এসে দানবদের শিকলে বেঁধে ফেলে, তারা ‘নম্র’ হয়। মন্ত্রেই এমনটি ঘটে। যা-ই ঘটুক, রূপকার্থেও যদি ‘দেবতা’ শব্দটির প্রয়োগ হয়ে থাকে, বাস্তবতা হলো, এমন রূপকের প্রয়োজন ফুরিয়েছিল বেশ আগেই। দেবতায় রোম্যান্টিকরা অনাস্থা প্রকাশ করতে থাকেন আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধ্ব থেকে, আর বিশ শতকের প্রথম দশকে আধুনিকরা বাতিল করে দেন দেবতার ধারণা।
কবিতায় রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নন; চিরআধুনিকও নন, যদি সে রকম কিছু থাকে। সত্য যে, তা নেই। আধুনিক সাহিত্য এক শতাব্দী পরেও আধুনিক সাহিত্য, এর ‘চির’ হওয়ার কিছু নেই। আধুনিক হওয়া বাধ্যতামূলক নয় কোনো কবির জন্যে। তবে প্রকৃত কবির লক্ষণ ধরা পড়ে তাঁর রচনায় সংস্কৃতির অগ্রগমনের কাজটি কেমন করে কতটা সম্পন্ন হয়েছে, তা লক্ষ করলে। রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রেও সেটি দেখা জরুরি। দেখলে বোঝা যায়, তিনি সফল হয়েছেন অপরিণত অবস্থা থেকে বাংলা ভাষাকে কবিতার জন্যে উপযোগী করে তোলার সাধনায়। সেই ভাষারও মৃত্যু ঘটেছে বেশ আগে। তাহলে রবীন্দ্রনাথের কবিতা কেন পড়ব? খুব সহজ এর উত্তর: সংস্কৃতিকে বোঝার জন্য। তবে বেশ আগেই সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছেন তিনি। কবির মৃত্যু হলে তিনি তা-ই হয়ে ওঠেন। সেই সংস্কৃতি এক সময় প্রথা হয়ে যায়। আজ, হায়, রবীন্দ্রনাথ একটি প্রথার নাম। বাঙালি মধ্যবিত্ত এখন এই প্রথার বাসিন্দা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০৪, ২০১০
আহমেদ কবির
আশরাফ একটা ছাগল। সে নিজেকে কি মনে করে? কুত্তার বাচ্চা তুই কারে কি বলিস জানস? রবি ঠাকুর কে তুই জানস?
সমুদ্র সন্তান
আহমেদ কবির যদি একটু বলে দিতে রবি ঠাকুর কে তাহলে খুব সুবিধা হত…..
অরুণ
দারুণ লিখেছেন চঞ্চল ভাই। স্যালুট!
Bijith
Sabai jodi Rabindranath ke chinte parto, tahole Rabindranath yer mullo nasto hato. Samuddrer nyay protivaban byaktike sahoje chena jayna.
Saqib
Just take it and go mother***.
অভয়চন্দ্র
কিসব বালছাল লিখে, আগা নাই মাথা নাই, সাহিত্যের রুপকের মাঝে বাস্তবতা খুঁজে আর দেবতা, প্রভু নিয়ে লিখলে সেটার দোষ ধরে, এসব অল্পবিদ্যের ছাগলে সাহিত্যাংগনটা ভরে গেছে বলেই অনেকবছর ধরে বাংলা সাহিত্যে বড় কোন লেখক/কবিই বের হচ্ছে না। এসব বালের লেখকদের কেন যে স্পেইস দেওয়া হয়। আমি প্রস্রাব করলেও এরথেকে ভাল লেখা লিখতে পারব।
কপোতাক্ষ
দেবতার কল্পনা যদিও উত্তর-আধুনিক ইন্টেলেকচুয়ালরাও করেছেন, রূপক ব্যবহার করে কবিতাও লেখা হয়েছে, লিখেছেন ভাস্কর চক্রবর্তী থেকে জয় গোস্বামী, সেটা কথা না; তাছাড়া হার্ডকোর সত্য রবীন্দ্রনাথ আস্তিক ও প্রবল আশাবাদী; (আর আধুনিকতা যেকোনো গামবাট ইতিবাচকতাকে সর্বৈব নাকচ করে), সকল ফ্যাকড়া ও কাউন্টারপ্রশ্ন বাদ দিলে যা লেখা আছে, তা অভিনন্দন+ ‘ওঁয়ার পদ্য পড়তে ভাল্লাগেনি’ বলার সাহসের জন্যে হাততালি-যোগ্য। প্রচুর নিন্দা ও গালিগালাজ প্রত্যাশিত, চাপ নেই, লেখকও তা জানেন নির্ঘাত। সমূহ অভিশাপ-উচ্চারণ সাইডে সরিয়ে, তাই আসুন, চেটো লাল করে একবার করমর্দন।
ঋতম
লেখাটা পড়ে প্রথমেই মনে হল যেটা সেটা হল রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর লেখার প্রতি একটা খুবই সাবজেক্টিভ আক্রমণ। আশরাফ বাবু এটা কোনোদিন প্রথম পর্যায়ের সাহিত্য সমালোচনায় পড়ে না(কোন পর্যায়ে পড়ে আপনি ভেবে দেখবেন পারলে)। তবে আপনার লেখার কিছু অংশ অবর্ণনীয় সত্য সেটাও না মেনে পারছি না। রবীন্দ্রনাথকে যে মধ্যবিত্ত বাঙালি নিজের গরিমা দ্যাখানোর একটা সহজ অস্ত্র বই আর কিছু মনে করেনি এবং ইংরেজরা যে তাঁকে নোবেল তাঁর কবিতার পটুতার থেকেও বেশি ঔপনিবেসিক রাজনীতির কারনে বেশি করে দিয়েছিলেন সেটা মানতে পারা গেল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ হাজার হাজার পাতা অতি সরল বাঙলার জীবনকাহিনী লিখেছেন( রোম্যান্টিক ন্যাকামি এবং বাকি যা যা আপনি বলতে চেয়েছেন)নিতান্ত সময়ের অপচয় করে এই বিষয়ে আঙুল তুলে কথা তাঁর বাবাও আশা করি বলবেন না। প্রত্যেকের নিজস্য দ্যাখার দৃষ্টিভঙ্গি আছে(আস্তিকের দুনিয়ায় নাস্তিক শয়তান আর নাস্তিকের দুনিয়ায় আস্তিক গরু হতেই পারে কিন্তু সেটা আক্রমণ বৈ সমালোচনা হয় না) আপনার কথা মতই কবিদের যেমন কোন গুরু নেই, সেরকম কবির লেখা কি হবে এবং কেন হবে সেটা ঠিক করে দেওয়ার মালিক আপনি কেন কেউ নয়। আর আধুনিকতার কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা হয়না, এটা tradition নামের জিনিসটার বিরুদ্ধে, এটা মাল্টি ডায়মেন্সানাল। জটিলটা দিয়ে আপনি এক কথায় উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছেন বটে, কিন্তু সেটাও tradition হয়ে যাচ্ছে, আবার কয়েকদিন পর এটাকেও ভাঙা হবে, তখন আপনি কি বলবেন?
ওমর ফারুক পারভেজ
রবীন্দ্রনাথের ”চিরআধুনিক” স্বীকৃতি সাহিত্যে তার স্বকীয় দর্শন, মৌলিকতা এবং অনন্য জীবন বোধেরই স্বীকৃতি।
এটা স্বীকার করে নিয়েছেন তার সমসাময়িক এবং বর্তমান যুগের সাহিত্যিকরাও।
কিছু খোড়া,মনগড়া যুক্তি দেখিয়ে রবীন্দ্রনাথের রচনা নিয়ে, বাংগালির চিরন্তন রবিন্দ্রভাবনা নিয়ে এরকম ধৃষ্টতাপূর্ন লেখা দিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করাই চঞ্চল আশরাফের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে স্পষ্ট প্রতীয়মান।