পেটের মধ্যে রায়ট
দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্ৰ পণ্ডিত ছিলেন মধ্যবিত্ত নিপাট বাঙালি। অত্যপ্ত সাদামাঠা জীবনযাপন করতেন। আড়ম্বর বা বড়লোকিয়ানা তার ধাতে সইতে না। এমনকি বড়লোকের বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে গিয়েও তিনি স্বাভাবিক থাকতে পারতেন না। বড়লোকের নিমন্ত্রণে তিনি প্ৰাণ খুঁজে পেতেন না। তিনি মেকি বড়লোকের ওপর হাড়ে চটা ছিলেন। একবার তিনি এক বড়লোকের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেয়ে পরের দিন সকালে ছাপাখানায় পত্রিকার কাজ করতে এসে ঢেকুর তুলে নলিনীকান্ত সরকারকে বললেন, ওহে নলিনী, একটু তামাক সাজ দেখি, শরীরটা ভাল নেই।
নলিনী জানতে চাইলেন, কেন, কী হল?
দাদাঠাকুর বললেন, বুঝলে না, কালকের ঐ ব্রাহ্মাণ ভোজনের জের, সারারাত পেট্রিয়ট হয়ে ছটফট করেছি বিছানায় পড়ে।
নলিনী অবাক হয়ে জিগ্যেস করলেন, কী বললেন? পেট্রিয়ট হয়ে। সেটা আবার কী?
দাদাঠাকুর উত্তর দিলেন, পেটের মধ্যে রায়ট বাধে বলেই তো লোকে পেট্রিয়ট হয়। আসলে লুচি, মাছ, মাংস, পোলাও, মিষ্টি সব পেটের মধ্যে ঢুকে পড়ায়, সেই সব অপরিচিতদের দেখে, যারা পেটের স্থায়ী বাসিন্দা, ডাল-ভাত-চচ্চড়িরা একসঙ্গে স্থ আর ইউ, হু অর ইউ বলে চিৎকার করে রায়ট বাঁধিয়ে দিল। সারারাত পেটের মধ্যে কী হট্টগোল! আমি তো সহ্যই করতে পারিনি। কষ্ট পেয়েছি। তোমার কাছে যখন এলুম। তখন একবার ঢেকুরের মধ্য দিয়ে হু আর ইউ বলে হাঁক ছাড়ল। শুনতে পেলে না? একথা শুনে নলিনীকান্ত হেসে উঠলেন।
Leave a Reply