সাপের মাথায় মণি
একদিন শরৎচন্দ্ৰ, উপেন্দ্ৰ গঙ্গোপাধ্যায় ও সুরেন গঙ্গোপাধ্যায়-তিন মামা-ভাগ্নে ভবানীপুরের জগুবাবু বাজারের ধারে এক ভাবে রাস্তার এক গর্তের দিকে তাকিয়েছিলেন। তাঁদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনেকের কৌত্বহল হল। এক ব্যক্তি শেষমেষ জিগ্যেস করে বসলেন, কী হয়েছে। এখানে? কী আছে। এই গর্তে?
নিরুত্তর তিনজন। কোনো কথারই উত্তর দিলেন না। শুধু আগের মত গর্তের দিকে তাকিয়ে থাকলেন এবং নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, দাখ, এবার যেন লাল আভা দেখা দিচ্ছে না!
তিনজনকে দেখে আরও কয়েকজন জড়ো হলেন সেইখানে। তাঁরা জানতে চাইলেন, মশাই কী হয়েছে? কী ব্যাপার?
শরৎচন্দ্ৰ এবার গভীর মুখে সুরেনকে বললেন, দ্যাখ, নীলচে আভা!
সুরেন বললেন, এই তো এবার আসমানি রঙ, এই দ্যাখ, এবার কেমন কমলালেবুর রঙ ছড়াচ্ছে!
তখন বিজ্ঞের মত উপেন্দ্ৰ বললেন, এই চুপ চুপ, আস্তে, না হলে পালিয়ে যাবে!
আশেপাশের লোকজন কিছুই বুঝছেন না। তাঁরা জানতে চাইলেন, কী পালাবে? কী পালাবে?
প্রশ্ন শুনে তিনজন একসঙ্গে উত্তর দিলেন, সাপ! সাপ!
বলার সঙ্গে সঙ্গেই তিন জন ভয় পেয়ে পিছিয়ে এলেন। উপেন্দ্র তখন একটু সাহস দেখিয়ে উকি মেরে বলে উঠলেন, এই আলোগুলো ওর মাথার মণির, কেমন সুন্দর আভা ছড়াচ্ছে দেখছিস না, কখনো লাল, কখনো নীল, কখনো আসমানি, কখনো
কথা শেষ হতে না হতেই শরৎচন্দ্ৰ বলে উঠলেন, ঐ দ্যাখ, আবার আলো ছড়াচ্ছে! এবার একেবারে পান্নার মতো সবুজ! দ্যাখ, দ্যাখ!
একথা শুনে রঙ দেখার জন্য অনেক মানুয মুখ বাড়াতে লাগলেন। ক্রমে ভিড় বাড়তে লাগল। সেই ফাঁকে শরৎচন্দ্ৰ, উপেন্দ্র এবং সুরেন চুপি চুপি সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন। এই ঘটনা সকালের।
বিকেলে তিনজন বেড়াতে বেড়িয়ে সেইখানে এসে দেখেন সেই গর্তের সামনে জনতার ভিড়!
এমন ভিড় যে রাস্তায় চলার উপায় নেই। গাড়িঘোড়া সব বন্ধ। সে এক হৈ হৈ ব্যাপার।
তিনজন ভিড়ের কাছে গিয়ে একজনকে জিগ্যেস করলেন, দাদা, এখানে এত ভিড় কেন? কী হয়েছে?
ভদ্রলোক বললেন, কী আশ্চর্যাকাণ্ড! গর্তের ভেতরে একটি; সাপ! তার মাথার মণি জুলছে! কখনো লাল, কখনো নীল, কখনো কমলা। আমি অবশ্য ওই সব রঙ দেখিনি, সবুজ দেখেছি! যান, গিয়ে দেখুন! তবে যা ভিড়, এগোতে পারবেন না, তবু একবার চেষ্টা করে দেখুন, যান, যান!
হাসি পাচ্ছে, কিন্তু হাসা চলবে না, অতিকষ্টে তিনজন হাসি চাপলেন। কোথায় সাপ! কোথায় মণি। তারা তো কেবল বদমায়েসি করেই সকলে এমন খবর ছড়িয়েছেন। তবে এখন, এই জনতার ভিড়ে তা স্বীকার করা যাবে না। বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। বরং যা হচ্ছে হোক। একটু দূরে গিয়ে তিনজন আর হাসি চাপিতে পারলেন না।
ছেলেবেলায় শরৎচন্দ্ৰ উপেন্দ্র ও সুরেনকে সঙ্গে নিয়ে এরকম অনেক মজার কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
Leave a Reply