দাড়ি বিভ্রাট
শরৎচন্দ্র খুব সুন্দর বানিয়ে গল্প বলতে পারতেন। রাসচক্রের আড্ডায় তিনি মাঝে মাঝেই এরকম গল্প শোনাতেন। একবার তিনি এমনই এক মজার গল্প শোনান। সেটা হল-
রবীন্দ্রনাথের এক বিশিষ্ট বন্ধুর পাকা দাড়ি ছিল। তিনি বিলাতে গেলে অনেকেই তাঁকে রবীন্দ্রনাথ বলে ভুল করেন। রবীন্দ্রনাথের কানে এই কথা যায়। একবার তিনি বন্ধটিকে ডেকে পাঠান। বন্ধুটি এলে রবীন্দ্ৰনাথ তাকে বলেন, আপনি বিলাতে গেলে অনেকে আপনাকে রবীন্দ্ৰনাথ মনে করেন তা আপনার দাড়ির জন্য। তাই লোকের যাতে আর না ভুল হয় তার জন্য বরং আপনি দাড়িটা কমিয়ে ফেলুন। বন্ধুটি বলেন আমার এত সাধের দাড়ি, কী করে কামাই! রবীন্দ্রনাথ তাকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, দাড়ি না কেটে তাহলে দাড়িতে মেহেন্দি করুন।
একথা শুনে বন্ধুটি রেগে গিয়ে বলেন, আমি মুসলমান নাকি, যে দাড়িতে মেহেন্দি করবো!
বেগতিক বুঝে রবীন্দ্রনাথ বন্ধুটির সঙ্গে বাক্যালাপ বন্ধ করে দিলেন।
শরৎচন্দ্রর এই গল্প শুনে আসরের প্রত্যেকেই মজা পেতেন। আর একবার শরৎচন্দ্ৰ কংগ্রেসকমী হেমস্তকুমার সরকারের কাছে একটি দাড়ি বিভ্রাটের গল্প শোনান। তিনি বলেন, হাওড়া শহরে একবার হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা হয়। তখন আমি দাড়ি রাখতাম। ম্যাজিষ্ট্রেট সেই সময় আমাকে মুসলমান মনে করে অনেকের সঙ্গে তলব করেন। শেষে আমি বলি, খুঁজুর, হাওড়া শহরে কি মুসলমানের অভাব? এই ব্রাহ্মণ সস্তানকে নিয়ে কেন অযথা টানাটানি করেন?
এরপর ম্যাজিষ্ট্রেট আমাকে চিনতে পেরে ছেড়ে দেন। আমি ঘরে ফিরেই দাড়ি কামিয়ে ফেলি।
শরৎচন্দ্র একই কথাকে বিভিন্ন জনের কাছে বানিয়ে বানিয়ে বিভিন্ন রকম করে বলতেন। শরৎচন্দ্ৰ ডক্টর সুনীতি চট্টোপাধ্যায়ের কাছে একটা গল্প শোনান। সেই গল্পেও দাড়ি বিভ্ৰাট। শরৎচন্দ্র রেঙ্গুন থেকে ফিরে আসার পর অনেকদিন পর্যন্ত দাড়ি রেখেছিলেন। তারপর, কেটে ফেলেন। কেন কেটে ফেলেন? সেটাই হল গল্প। তিনি বলেন, তখন আমি হাওড়ার বাজে শিবপুরে থাকি। সেখান থেকে যাই দিদির গ্রামে, নিছক বেড়াতে। ফেরার পথে ট্রেনে আমার পাশেই বসেছিল এক মুসলমান। সে আমার দাড়ি দেখে আমাকে মুসলমান মনে করে আমাকে এক খিলি পান খাওয়াতে আসে। এই ঘটনার পর আমি বাড়ি ফিরেই দাড়ি কমিয়ে ফেলি।
Leave a Reply