চরকা না যুদ্ধ
শরৎচন্দ্ৰ কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন, কিন্তু কংগ্রেসের চরকা ও খন্দরের ব্যাপারে। বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন না যে, চরকা কাঁটলেই স্বরাজ ত্বরান্বিত হবে। তবু কংগ্রেস চরকা কাটার প্রোগ্রাম নিয়েছিল বলেই তিনি চরকা কাটা শিখেছিলেন ও খদ্দর পরতেন। শরৎচন্দ্ৰ কংগ্রেসের হাওড়া জেলা কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন। একবার কলকাতায় এসেছেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি তখনকার অন্যতম জাতীয়তাবাদী দৈনিক সার্ভেন্ট-এর কার্যালয় দেখতে যান কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে। দলে ছিলেন শরৎচন্দ্ৰও। সার্ভেন্ট-এর সম্পাদক শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী ছিলেন বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি। মহাত্মা গান্ধী কলকাতায় উঠেছেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের বাড়িতে। সেখান থেকেই যান সার্ভেন্ট কাৰ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে গান্ধীজী সকলকে নিয়ে চরকা কাটতে চাইলেন। সেই মত চরকা আনা হল। শরৎচন্দ্ৰ সহ অনেকেই গান্ধীজীর সঙ্গে চরকা কাটতে বসলেন। শরৎচন্দ্র চরকা কাটায় দক্ষ ছিলেন। তাঁর সুতো মিহি হচ্ছিল। শ্যামসুন্দর চক্রবতীর সুতো হচ্ছিল মোটা। তা দেখে গান্ধীজী রসিকতা করে বললেন, আরে! বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির সভাপতি যে চরকায় দড়ি কাটছেন!
যদিও গন্ধীজী জানতে শরৎচন্দ্র চরকায় অবিশ্বাসী তবু তিনি শরৎচন্দ্ৰকে জিগ্যোস করলেন, আপনি চরকায় বিশ্বাস করেন?
শরৎচন্দ্ৰ বললেন, না, বিশ্বাস করি না।
গান্ধীজী বললেন, তবু আপনি ভাল সুতো কাটছেন চরকায়।
শরৎচন্দ্ৰ বললেন, আমি আপনাকে ভালবাসি বলেই চরকায় সুতো কাটা শিখেছি। না হলে এতে আমার বিশ্বাস নেই।
গান্ধীজী জানতে চাইলেন, আপনি কি বিশ্বাস করেন না। চরকা কাটা স্বাধীনতার পক্ষে সহায়ক?
শরৎচন্দ্ৰ উত্তরে বললেন, না, আমি বিশ্বাস করি না চরকা কাটা স্বাধীনতার পক্ষে সহায়ক। আমি মনে করি স্বাধীনতা আসবে এক মাত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়েই।
একথা শুনে গান্ধীজী চুপ করে গিয়ে চরকা কাটায় মন দিলেন।
Leave a Reply