অরক্ষণীয়ার উপসংহার
শরৎচন্দ্রের বিখ্যাত রচনা অরক্ষণীয়া গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে ভারতবর্ষ মাসিকপত্রে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। শেষ অংশ ভারতবর্ষ। পত্রিকায় প্রকাশের জন্য এলে অংশটি পড়ে দেখেন পত্রিকার অন্যতম সত্ত্বাধিকারী হরিদাস চট্টোপাধ্যায়। তিনি শরৎচন্দ্রের বন্ধু ছিলেন। অংশটি পড়ে হরিদাস শরৎচন্দ্ৰকে শেষ অংশটা একটু অন্যরকম ভাবে লিখতে নির্দেশ দেন। হরিদাসের নির্দেশ পছন্দ হয় শরৎচন্দ্রের। তিনি উপসংহারটি পরিবর্তন করে দেন। পত্রিকায় সম্পূর্ণ প্রকাশের পর গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এ্যাণ্ড সন্স থেকে লেখাটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এটা হরিদাস চট্টোপাধ্যায়দেরই প্রতিষ্ঠান।
হরিদাস চট্টোপাধ্যায়ের কাছে একটি চিঠি আসে। তাতে লেখা :-
অরক্ষণীয়ার উপসংহার নিয়ে আমাদের মধ্যে এক দলের মত–জ্ঞানদাকে শ্মশান থেকে নিয়ে যাবার পর অতুল তাকে বিয়ে করবে, শরৎবাবু এই ইঙ্গিত দিয়েছেন। অপর দল বলছে-না, তা কখনই নয়। আপনি যদি দয়া করে শরৎবাবুর কাছ থেকে তার নিজের অভিমতটি জেনে দেন তো বড় ভাল হয়!
হরিদাস এই পত্রের কথা শোনালেন শরৎচন্দ্ৰকে। শরৎচন্দ্ৰ সব শুনে হাসতে হাসতে বললেন, আপনার কথা শুনেই তো এই বিপদ হল! আমি তো বেশ জ্ঞানদাকে জলে ডুবিয়ে মেরেছিলুম। তাতে অতুল বাঁচতে কালো মেয়ের হাত থেকে, আর বাঁচতো লেখক এবং প্রকাশক। এখন কী জবাব দেব? এমন আরো চিঠি এলেই গেলুম!
শরৎচন্দ্র এরপর বললেন, ওরা জানতে চেয়েছে শ্মশান থেকে যাবার পর অতুল আর জ্ঞানদার কী হল—এই তো? আচ্ছা, আপনি লিখে দিন–শরৎবাবুকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি উত্তর দিয়েছেন, জ্ঞানদা বা অতুল কারো সঙ্গে শরৎবাবুর দেখা হয়নি, তাই তিনি বলতে পারবেন না।
শরৎচন্দ্রের এই মজার উত্তর শুনে হরিদাস হো হো করে হেসে উঠে বললেন, শরৎবাবু, আপনি পারেনও বটে!
Leave a Reply