জলধর কথা
ভারতবর্ষ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন সাহিত্যিক জলধর সেন। ১৩৪১ সালে তার ৭৫ তম জন্মদিনে দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। এই উপলক্ষে . ঐ সময় জলধর কথা নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। পুস্তিকায় লেখেন বাংলার বিখ্যাত লেখক-লেখিকারা। ব্ৰজমোহন দাসের ওপর পড়েছিল এই পুস্তিকা সম্পাদনার ভার।
জলধর সেনকে নিয়ে পুস্তিকা, সেখানে শরৎচন্দ্রের লেখা থাকবে না তা হয়! শরৎচন্দ্র ছিলেন ভারতবর্ষ পত্রিকার লেখক। জলধর সেনের সঙ্গে তার যথেষ্ট সুসম্পর্ক ছিল। জলন্ধর কথা পুস্তিকার জন্য শরৎচন্দ্রের লেখা অবশ্যই চাই। তাই ব্ৰজমোহন কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ছুটলেন শরৎচন্দ্রের হাওড়ার সাম্যতাবেড়ের বাসায়। শরৎচন্দ্ৰ ব্ৰজমোহনকে দেখে অবাক হলেন এবং জিগ্যেস করলেন, কী ব্যাপার?
ব্ৰজমোহন পুস্তিকায় লেখার জন্য অনুরোধ করলেন শরৎচন্দ্ৰকে। শরৎচন্দ্ৰ হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বললেন, তোমরা কার কথা বলছি? জলধরদা কথা? তিনি তো মারা গেছেন! তোমরা জাননা?
ব্ৰজমোহন অবাক, বললেন, সে কী! আমরা তো কাল রাতে তার কাছে নটা পর্যন্ত ছিলাম! কখন এমন হল?
শরৎচন্দ্র বললেন, তোমরা চলে আসার পরেই জলধরদার শরীর খারাপ হয়। তারপর ভোরে হার্টফেল! জলধারদার বয়েস হয়েছিল। তাছাড়া ব্লাডপ্রেসারও ছিল।
ব্ৰজমোহন বললেন, আমরা শুনিনি। আপনি খবর পেলেন কী ভাবে?
শরৎচন্দ্রর বললেন, উনার বাড়ি থেকে সকলে টেলিগ্রাম এসেছিল। আমার শরীরটাও কদিন ভাল যাচ্ছে না। না হলে একবার শেষ দেখা দেখে আসতাম।
জলধর সেনের মৃত্যু সংবাদ শুনে বিমর্ষ হয়ে পড়লেন ব্ৰজমোহন ও তাঁর বন্ধুরা। এমন সময় কাজের লোক চা-জলখাবার নিয়ে এলে শরৎচন্দ্ৰ বললেন, নাও হে, খেয়ে নাও। ভয় পেওনা, আমি লেখা দেব তোমাদের পুস্তিকায়।
ব্ৰজমোহন বললেন, তবে যে বললেন জলধারাবাবু মারা গেছেন। শরৎচন্দ্ৰ এবার হাসতে হাসতে বললেন, না-না, জলধারদা মরেননি, তোমাদের এমনি বলে দেখছিলাম, তোমরা কী বলো! নাও তাড়াতাড়ি চা-জলখাবার খেয়ে নাও। হ্যাঁ, লেখাটা আমি তাড়াতাড়ি লিখে দেব।
এ কথা শুনে স্বাভাবিক হলেন ব্ৰজমোহন ও তার বন্ধুরা।
Leave a Reply