আফিং এবং মিষ্টি
শরৎচন্দ্র একদিন লেখা দিতে এসেছেন ভারতবর্ষ পত্রিকার অফিসে। সেই সময় অফিসে ছিলেন না পত্রিকার সত্ত্বাধিকারী হরিদাস চট্টোপাধ্যায় কিংবা তার ছোট ভাই সুধাংশুশেখর চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। শরৎচন্দ্ৰ লেখার পাণ্ডুলিপি জমা দিয়ে নানারকম গল্প করছেন অফিসের কর্মচারীদের সঙ্গে। কথা বলতে বলতে বিকেল হয়ে গেল। আফিং খাওয়ার সময় হয়েছে। শরৎচন্দ্রের। তিনি পকেট থেকে আফিং-এর কৌটো বের করে একটা আফিং-এর পাকানো বড়ি মুখে পুরে দিলেন। কাজ ফেলে কর্মচারীরা শরৎচন্দ্রের আফিং খাওয়া দেখতে লাগলেন। তা দেখে শরৎচন্দ্ৰ হাসতে হাসতে বললেন, আমার আফিং খাওয়া দেখে বুঝি সবার খুব লোভ হচ্ছে? তারপর তিনি একজনকে বললেন, আপনি যদি একটু আফিং খান তাহলে আমার মত সাহিত্যিক হয়ে যাবেন।
এই ভাবে বুঝিয়ে শরৎচন্দ্র অফিসসুদ্ধ সকলকেই আফিং খাইয়ে দিলেন।
সাহিত্যিক হবার আশায় অফিসের সকলকেই আফিং-এর নেশায় বুদ! এই দেখে শরৎচন্দ্ৰ বন্ধু হরিদাস চট্টোপাধ্যায়কে একটা চিঠি লিখে দারোয়ানের হাত দিয়ে তখনই পাঠিয়ে দিলেন। তিনি লিখলেনঃ–
ভায়া, আফিংয়ের রূপের মোহে, আর কেউ কেউ আফিং ধরে আমার মত সাহিত্যিক হবার লোভে, আপনার অফিসসুদ্ধ সমস্ত কর্মচারীই আমার কাছ থেকে জোর করে আফিং কেড়ে নিয়ে খেয়ে বসে আছে। এখন তারা আফিংয়ের নেশায় ঝিমুচ্ছে। এখন যদি না তাদের মিষ্টি খাওয়ার ব্যবস্থা করেন, ঝিমুনি কাটবে না। তা হলে কি হবে বুঝতে পারছেন? আপনার হাতে এখুনি পুলিশের হাতকড়া পড়বে। অতএব পত্রপাঠ কিছু মিষ্টি পাঠিয়ে দিন।
চিঠি পড়ে হরিদাস চট্টোপাধ্যায় বুঝতে পারলেন শরৎচন্দ্রের আসল উদ্দেশ্য। মনে মনে হাসলেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই দারোয়ানের হাতে দশটাকা পাঠিয়ে দিলেন। শরৎচন্দ্ৰ সেই দশটাকা হাতে পেয়ে দোকান থেকে মিষ্টি আনিয়ে আফিং-এর নেশায় বুদ হয়ে থাকা কর্মচারীদের খাওয়ালেন এবং নিজে খেলেন। যাবার সময় বলে গেলেন, বুঝলেন তো আফিং-এর কী ক্ষমতা!
Leave a Reply