সভাপতি
শরৎচন্দ্ৰ কোনো সাহিত্যসভায় গিয়ে গভীরমুখে বসে থাকতে পারতেন না। ভক্তবৃন্দের আমন্ত্রণে তাঁকে প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করতে হত। তিনি মঞ্চের ওপর ফরাসে শ্রেষ্ঠ আসনে বসে হয় এদিক সেদিক তাকাচ্ছেন, নাহলে হাঁটুর ওপর হাতের আঙুলগুলো বা পা নাচাচ্ছেন। কখনো বা ফুলদানি হাতে তুলে নিয়ে বলছেন,
বাঃ, কী চমৎকার! কত দাম এই ফুলদানিটার?
অনেকে তাকে ইশারা করে এরকম করতে নিষেধ করতেন। পরে তিনি তাদের বলতেন, আমি গেয়ো মুখু মানুষ, এসব তো দেখিনি।
আসলে এ রকম আচরণ করে তিনি মজা পেতেন। সঙ্গীরা তাকে সামলানোর চেষ্টা করছেন দেখে তিনি খুশি হতেন। কেন তিনি এমন করতেন? তিনি বলতেন, এই সব সভা সমিতিতে কত মানুষ আসে, কেউ কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে ভদ্রভাবে বসে বড়ো বড়ো কথা বলে, কেউ ভাবালু চোখে শোনে। দু। তরফই ভাব দেখায় যেন তারা কত বড় বিদগ্ধ, সত্যদ্রষ্টা, আলোচ্য বিষয়ের কাণ্ডারী। কিন্তু মোদা কথা হল, জীবনের সঙ্গে মনের গভীরে এই সব ভঙ্গীর হয়তো কোন যোগ নেই। সব লোক দেখানো। এই লোকদেখানে আচরণ আমার একদম পছন্দ নয়। আমি যেমন, সবার সামনে তেমন ভাবেই থাকতে চাই। চাই সহজ সরল ভাবে থাকতে। এটাই আমার জীবন দর্শন।
শরৎচন্দ্রের এ হেন কথা সকলে উপভোগ করতেন।
Leave a Reply