ব্যাকরণ কৌমুদী পড়া
শরৎচন্দ্র তখন থাকেন হাওড়ার পাণিত্রাস-সামীতাবেড়েব বাড়িতে। রূপনারায়ণ নদীর ধারে এই জায়গাটি ছিল তার খুব পছন্দের। একদিন সকালে তিনি সদর দালানে বসে মন দিয়ে প্রোগ্রেস অব সায়েন্স নামে একখানা বই পড়ছিলেন। পড়া বা লেখার সময় কেউ তাকে বিরক্ত করলে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন।
বঙ্গ মনীষীদের রঙ্গ রসিকতা এমন সময় বাইরে থেকে ডাক এল, শরৎবাবু আছেন?
বই থেকে মুখ তুলে শরৎচন্দ্র দেখেন একজন ভদ্রলোক এসেছেন। সঙ্গে এক তাড়া কাগজ, অর্থাৎ পাণ্ডুলিপি। সেটা দেখেই শরৎচন্দ্ৰ বুঝে গেলেন কী উদ্দেশ্যে ভদ্রলোকের আগমন। তবু হাসি মুখে বললেন, বলুন, কী চান?
ভদ্রলোক আমতা আমতা করে বললেন, একটা গল্প লিখেছি। আপনি যদি সেটা কাইণ্ডলি কারেক্ট করে দেন তাহলে ভাল হয়।
ভদ্রলোকের মুখে ইংরেজি শব্দ দুটি শুনেই শরৎচন্দ্রের মাথা গরম হয়ে গেল; তবু তিনি মজা করে জিজ্ঞেস করলেন, মহাশয়ের কী করা হয়?
ভদ্রলোক বললেন, বি-এস-সি পড়ি।
শরৎচন্দ্র আবার জিগ্যেস করলেন, ব্যাকরণ কৌমুদী পড়া কতদিন আগে ছেড়েছেন?
ভদ্রলোক মাথা চুলকে বললেন, তা প্ৰায় বছর চারেক আগে।
শরৎচন্দ্ৰ হাসতে হাসতে বললেন, তাহলেতো এখন আর কিছু করা যাবে না। কৌমুদীর সন্ধি, সমাস, তদ্ধিত আর কৃৎ প্রত্যয়গুলো বেশ ভাল করে পড়ে আসুন, তখন দেখে দেব।
শরৎচন্দ্রের কথা শুনে ভদ্রলোক পাণ্ডুলিপি নিয়ে চলে গেলেন। শরৎচন্দ্র আবার মন দিলেন বই পড়ায়।
Leave a Reply