আপনাদের জন্য আমাদের জন্য
মানুষ বিখ্যাত হয়ে গেলে স্তাবক জোটে, চাটুকার জোটে! কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। তার কাছে নিয়মিত বিভিন্ন লোক আসা-যাওয়া করতেন। শরৎচন্দ্র অবশ্য বিশেষ কয়েকজন ছাড়া বাকিদের বেশি আমল দিতেন না। কিন্তু মুখেও কিছু বলতেন না। একদিন সকালে শরৎচন্দ্ৰ উপন্যাস লিখছিলেন। এমন সময় কয়েকজন কাশতে কাশতে ঢুকলেন শরৎচন্দ্রের ঘরে। লেখা বন্ধ হয়ে গেল শরৎচন্দ্রের। কিন্তু কী করেন। কাউকে তাড়িয়ে দেওয়া তো যায় না। অতিথিদের বসতে বললেন তিনি। অতিথিরা সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা জুড়ে দিলেন। বিভিন্ন কথা উঠছে। শরৎচন্দ্ৰ হুঁ হুঁ করে উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই শরৎচন্দ্রের ভক্ত। স্তাবক বলাই ভাল। উঠল রবীন্দ্ৰনাথ প্রসঙ্গ। স্তাবকদের দল শরৎচন্দ্রের প্রশংসা করার পাশাপাশি বলে উঠলেন, দেখুন শরৎচন্দ্ৰবাবু, রবিঠাকুরের লেখা বড় দুর্বোধ্য। আপনার লেখা বরং আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু রবি ঠাকুরের অধিকাংশ লেখায় আমরা দাঁত ফোটাতে পারি না।
এতক্ষণ শরৎচন্দ্ৰ চুপচাপ হুঁ হুঁ করে উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিছু আর থাকতে পারলেন না। এবার মুখ খুললেন। হাসতে হাসতে বললেন, ‘মহাশয়েরা, আপনাদের সব কথা শুনলাম। রবীন্দ্রনাথের লেখা সম্পর্কে আপনাদের অভিমতও শুনলাম। আসলে আমার অভিমত হল-আমি যা লিখি তা আপনাদের জন্য, আর গুরুদেব রবীন্দ্ৰনাথ যা লেখেন তা আমাদের জন্য। এই হল তফাৎ। বুঝলেন?
শরৎচন্দ্রের কথা শুনে স্তাবকের দল চুপ করে গেলেন।
Leave a Reply