বারোটা বাজেনি
কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। একটার পর একটা প্ৰকাশিত হচ্ছে তার বিখ্যাত উপন্যাসগুলি। লেখকদের নামের সঙ্গে ও লেখার সঙ্গে সাধারণ মানুষ যতটা পরিচিত ততটা চেহারার সঙ্গে নয়। তাই শরৎচন্দ্ৰ প্রমুখ লেখকরা নিজেদের ইচ্ছেমত বাইরে বের হতেন। পাশ দিয়ে পেরিয়ে গেলেও সাধারণ লোকেরা বুঝতেও পারতেন না-ইনিই সেই বিখ্যাত সাহিত্যিক!
একদিন শরৎচন্দ্ৰ হাওড়া ব্রিজ পার হচ্ছেন পায়ে হেঁটে। হাঁটছেন, কিন্তু মাথায় ঘুরছে নতুন উপন্যাসের প্লট। স্বভাবতই একটু অন্যমনস্ক। কবি-সাহিত্যিকরা সচরাচর যে রকম হন। আরকি। পরনে ধুতি-পাঞ্জাবি, কাঁধে ব্যাগ। ব্যাগে নতুন লেখা উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি। কলকাতার একটি বিখ্যাত পত্রিকা অফিসে যাচ্ছেন। গঙ্গার স্রোত, ফুরফুরে হাওয়া। এমন সময় ঘটল এক কাণ্ড। কী কাণ্ড?
একজন কমবয়সী পকেটমার হঠাৎ হাত বাড়ােল তার বুক পকেট থেকে চেনশুদ্ধ ঘড়িটা ছিনিয়ে নেবার জন্য। বুঝতে পেরে শরৎচন্দ্ৰও সঙ্গে সঙ্গে খপ করে ধরে ফেলেন। পকেটমারের হোতটা। চালাক পকেটমার ভয় না পেয়ে জিগ্যেস করে, স্যার, আপনার ঘড়িতে কটা বাজে?
শরৎচন্দ্র তখন পকেটমারের পিঠে সজোরে দুম করে একটা গুমসো কিল মেরে বলেন, একটা।
কিল হজম করে উরিক বাবা। বলে লাফিয়ে ওঠে পকেটমার, তারপর বলে, ভাগ্যিস বারোটা বাজেনি! না হলে আজ আমার দফারফা হয়ে যেত।
এই বলে সে ছুটে পালাল হাওড়া স্টেশনের দিকে। পকেটমারকে জব্দ করে হাসতে হাসতে আবার হাঁটতে লাগলেন শরৎচন্দ্ৰ।
Leave a Reply