গো-মাতার সন্তান
‘গোরক্ষিণী’ সভার সম্পাদক গিরধারীলাল একদিন স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। বিবেকানন্দ তখন মনোযোগ সহকারে একটি ধর্মগ্রন্থ পাঠ করছিলেন। গিরধারীকে দেখে তিনি হাসিমুখে আলাপ শুরু করলেন ও জিগ্যেস করলেন, মিশাই, আপনাদের সভার উদ্দেশ্য কী?’
স্বামীজীর প্রশ্ন শুনে উৎসাহিত হয়ে গিরধারীলাল বললেন, ‘স্বামীজী আমরা বিভিন্ন জায়গায় পিজরাপোল স্থাপন করেছি।’
বিবেকানন্দ জিগ্যেস করলেন, কী করা হয়। ওখানে?’
গিরিধারী বললেন, জরাগ্রস্থ, দুর্বল, রুগ্ন গো-মাতাদের আমরা সেখানে রেখে লালন-পালন করি এর সঙ্গে কসাইরা তাদের যাতে আর জবাই না করতে পারে তার ব্যবস্থাও করি।’
বিবেকানন্দ গভীর মুখে বললেন, আপনাদের উদ্দেশ্য অবশ্যই সৎ। সাধুবাদ না জানিয়ে পারা যায় না। কিন্তু এই যে মধ্যভারতে শুনলাম অনাহারে প্রায় নয় লক্ষ মানুষ মারা গেছে, এই দুৰ্ভিক্ষ নিবারণে আপনারা কত টাকা সাহায্য করেছেন?’
বিবেকানন্দের কথা শুনে গিরধারী আমতা আমতা করে বললেন, আজেও, আমরা দুর্ভিক্ষে সাহায্য করি না। গো-মাতাদের রক্ষণ করাই আমাদের পরম ধর্ম।’
শুনে মাথা গরম হয়ে গেল বিবেকানন্দের। তিনি বললেন, কী বলেন মশাই, গোমাতাদের রক্ষণ করাতেই শুধু আপনাদের ধর্ম। আর প্রায় মরতে বসা মানুষের মুখে একমুঠো অন্ন তুলে দেওয়া বুঝি আপনাদের ধর্ম নয়?’
গিরধারী অজুহাত দিয়ে বললেন, ‘নিজের পাপে, নিজের কর্মফলের জন্যই তো মানুষ মরছে।’
স্বামীজী পাল্ট বললেন, ‘আর গো-মাতারা? তারাও তো নিজেদের কর্মফলের জন্যই কসাইয়ের হাতে পড়ে। তবে কী দরকার তাদের বাঁচিয়ে?’
গিরধারী পুরোপুরি মানতে চান না। তিনি বলেন, স্বামীজী, আপনি যা বলছেন তা একদম ফেলে দেবার নয় তা মানছি, কিন্তু শাস্ত্ৰে আছে গাভী আমাদের মাতা। এবার কী বলবেন?’
বিবেকানন্দ বুঝলেন অবুঝের সঙ্গে আলোচনা বা তর্ক করে লাভ নেই। শেষে তিনি হেসে রসিকতা করে বললেন, হ্যাঁ, ঠিকই, গাভী যে আপনাদের মাতা তা আমি বেশ বুঝতে পারছি! তা না হলে এমন সব ছেলে কেন জন্মাবে?’
গিরধারী বিবেকানন্দের রসিকতার অর্থ বুঝলেন ও সুড়সুড়ি করে মাথা নামিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
Leave a Reply