নখ কাটার গল্প
স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন রসিক মানুষ। সময়ে অসময়ে তিনি বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে রঙ্গ রসিকতায় মেতে উঠতেন।
একবার স্বামী বিবেকানন্দ গেছেন আমেরিকার চিকাগো শহরে। বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে যোগ দিতে। সেখানে তিনি উঠেছেন জর্জ হেলের বাড়িতে। স্বামীজী বেশ কিছুদিন হাত, পা-এর নখ কাটার সময় পাননি বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে। নখ কাটতে হবে —তাই তিনি একটি পেনসিল কাটার ছুরি চাইলেন জর্জ হেলের কন্যাদের কাছে। তারা জিগ্যেস করল, ছুরি দিয়ে কী করবেন?
স্বামীজী বললেন,’ হাত পায়ের নখ বড় হয়েছে, কাটবো।’
স্বয়ং স্বামীজী নখ কাটার জন্য ছুরি চেয়েছেন! কে আগে এনে দিতে পারে-এ নিয়ে জর্জ হেলের কন্যাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে গেল। শেষমেষ একটি মেয়ে ছুরি এনে ‘কই দিন, আমিই নখ কেটে দিই’-বলে গালিচার ওপর পিছন দিকে পা মুড়ে বসল। তারপর ভক্তিভরে অতি সন্তৰ্পণে পায়ের বুট ও মোজা খুলে নখ কাটতে লাগল। কী নখ কাঁটার ধরন! এই নখ কাটে, তো সেই নখ কাটে। কখনো পা হাঁটুর ওপর রেখে আস্তে নখ কাটে, কখনো পা গালিচায় রেখে নখ চাঁচে, কখনো সে নিজেই প্ৰায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে মাথা নিচু করে। বিবেকানন্দের যেন ছেড়ে দেমা, কেঁদে বাঁচ অবস্থা। অনেকক্ষণ পর নখ কাটা শেষ করে পায়ে জুতো-মোজা পরিয়ে দিয়ে যন্ত্রপাতি গুটিয়ে মেয়েটি বিবেকানন্দের সামনে হাত পেতে বলল, স্বামীজী, কই দাম দিন, আপনার নখ কেটে দিলাম যে, আমরা আমেরিকানরা দাম না পেলে কোনো কাজ করি না। নাপিতের দোকানে নখ কাটলে আপনাকে দু-তিন ডলার দিতে হতো। আমি ঘরে বসে কেটেছি, কমসম করে এক ডলার দিলেই চলবে। কই দিন, দিন।’
মেয়েটির কথা শুনে হাসলেন স্বামীজী। তারপর বললেন, ‘বুঝলাম, কিন্তু এই যে তুমি আমার পা ছোঁয়ার ও নখ কাটার অধিকার পেয়েছ, এর জন্য কী দেবে আমাকে? যে সে আমার পা ছুঁতে পারে না। আমার পা ছুঁলে প্ৰণামী দিতে হয়। পোপদের পা ছুঁলেও টাকা দিতে হয় শুনেছি। এবার বলো তুমি কী করবে, কত টাকা প্ৰণামী দেবে আমাকে?
স্বামী বিবেকানন্দের কথা শুনে মেয়েটি দু’চোখ গোলগোল করে বলল, বাব্বা! কাজও করবো আবার টাকাও দেবো?’ –এই বলে মেয়েটি ছুটে ভেতরে চলে গেল। কাণ্ড দেখে হেসে উঠলেন জর্জ হেল ও তাঁর অন্য মেয়েরা। হাসলেন বিবেকানন্দও।
টাকা নয়, স্বামীজী ওই মেয়েটিকে পরে একটি সুন্দর উপহার এনে দিয়েছিলেন।
Leave a Reply