দাঁড়ি কলপ
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-এর কলকাতার বাড়িতে একদিন ঘরোয়া সাহিত্যসভা বসেছে। তাঁর বন্ধু সাহিত্যিক-কবিরা অনেকেই এসেছেন। কেউ স্বরচিত রচনা পাঠ করছেন, কেউ মত্ত আলোচনায়। মাঝেমাঝে নানারকম কথাবার্তা হচ্ছে। চলছে টুকটাক খাওয়া দাওয়া। এমন সময় দ্বিজেন্দ্ৰলাল রসিকতা করেই বললেন, ওহে, আজকের এমন দিনটা যে শুধুমাত্ৰ সাহিত্যচর্চা করে মিছে কেটে যাচ্ছে! বলে দেখি কী করা যায়?’
এক বন্ধু হাসতে হাসতে বললেন না-না, মিছে কাটতে দেব না, খানিকবাদেই এসে যাচ্ছেন্ন দাদামশায়, তার পাকা দাড়িতে কলপ লাগালে কেমন হয়?’
দ্বিজেন্দ্রলাল বললেন, ‘মন্দ বলনি বন্ধু!’
তো দ্বিজেন্দ্ৰলাল এর সঙ্গে সঙ্গেই তার চাকরকে ডেকে একটি শিশিতে জল ভরে কাগজে মুড়ে রাখতে বললেন এবং শিখিয়ে দিলেন-যখনই দাদামশায় আসবেন তখন ডাকা মাত্ৰই যেন সে কাগজে মোড়া শিশিটা নিয়ে আসে, আর কেউ জিগ্যেস করলে যেন বলে-’ওষুধের দোকান থেকে কেনা।’
সব প্রস্তুতি সারা। বাইরে কাশতে কাশতে কে যেন এলেন! দাদামশায় এসেছেন! যত্ন করে দাদামশায়কে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো কিছুক্ষণ পরে দ্বিজেন্দ্রলাল কথা প্রসঙ্গে দাদামশায়-এর দাড়িতে কলপ লাগানোর ইচ্ছে প্ৰকাশ করলেন ও কলপ আনা হয়ে গেছে বলে চাকরকে ডাক দিলেন। ডাক পাওয়া মাত্র যাই প্রভু’ বলে চাকর কলাপের শিশি হাতে হাজির।
দ্বিজেন্দ্রলালের কবি-সাহিত্যিক বন্ধুরা দাদামশায়-এর লম্বা দাড়ি ধরে কলাপের শিশি নিয়ে কলপ লাগানোর চেষ্টা করলেন। দাদামশায়ও ভয়ে তাদের হাত থেকে দাড়ি ছাড়িয়ে নিলেন ও ছুটে পালিয়ে দাড়ি কলপ হবার থেকে বাঁচলেন!
ভীত দাদামশায়ের ছুটে পালানো দেখে দ্বিজেন্দ্রলাল ও তার বন্ধুরা হেসে গড়াগড়ি খেলেন। এই দাদামশায় ছিলেন সাহিত্যিক প্রসাদদাস গোস্বামী। তিনি ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলালের আত্মীয় ও নিত্যসহচর। দ্বিজেন্দ্ৰলাল সম্পর্কে প্রসাদদাসের নাতজামাই হতেন। তাই দ্বিজেন্দ্রলাল প্রসাদদাসকে দাদামশায় বলতেন।
Leave a Reply