নিমন্ত্রণপত্ৰ
বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক প্রতাপচন্দ্র মজুমদার ছিলেন কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের শ্বশুরমশাই। দ্বিজেন্দ্রলাল একবার তাঁর শ্বশুরবাড়িতে বন্ধুবান্ধবআত্মীয়স্বজনদের এক ভোজ দিয়েছিলেন। তার শ্যালক জিতেন্দ্রনাথও ছিলেন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক।
যে নিমন্ত্রণ পত্রটি তিনি পাঠিয়েছিলেন নিমন্ত্রিতদের, তা এরূপ–
‘যাহার কুবেরের ন্যায় সম্পত্তি, বৃহস্পতির ন্যায় বুদ্ধি, যমের ন্যায় প্রতাপ, এহেন আপনি আপনার ভবনের নন্দনকানন ছাড়িয়া, আপনার পদ্মাপলাশনয়না ভামিনী সমভিব্যাহারে, আপনার স্বৰ্ণশকটে অধিরুঢ় হইয়া এই দীন অকিঞ্চিৎকর অধমদের গৃহে, শনিবার মেঘাচ্ছন্ন অপরাহ্নে আসিয়া যদি শ্ৰীচরণের পবিত্ৰ ধূলি ঝাড়েন। –তবে আমাদের চৌপুরুষ উদ্ধার হয়।
ইতি
শ্ৰীসুরবালা দেবী শ্ৰীদ্বিজেন্দ্রলাল রায়। শ্ৰীজিতেন্দ্রনাথ মজুমদার।’
এই নিমন্ত্রণ পত্র পড়ে প্রত্যেকেই মজা পেয়েছিলেন। অনেকেই এর প্রত্যুত্তরে কৌতূকময় উত্তর দিয়েছিলেন। কবি ও দার্শনিক দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর কাব্য করে লেখেন। —
‘ন চ সম্পত্তি ন বুদ্ধি বৃহস্পতি,
যমঃ প্ৰতাপ চ নাহিক মে।
ন চ নন্দনকানন, স্বর্ণসুবাহন
পদ্মবিনিন্দিত পদ্মযুগ মে।
আছে সত্যি পদরজ রক্তি, —তাও পবিত্র কি জানিত নে,
চৌপুরুষ তব ত্ৰাণ পায় যদি, অবশ্য ঝাড়িব তব ভবনে।
কিন্তু —
মেঘাচ্ছন্ন শনি অপরাহ্নে যদি গুরু বাধা ঘটে মে
কিম্বা যদ্যপি সহসা চুপি চুপি প্রেরিত না হইপরাধামে।’
দ্বিজেন্দ্ৰনাথ ঠাকুরের এই কাব্য-পত্র পড়ে মজা পেয়েছিলেন। দ্বিজেন্দ্রলাল স্বয়ং। দ্বিজেন্দ্রলালের শ্যালিকাপতি ব্যারিস্টার কুমুদ চৌধুরীও নিমন্ত্রণ পত্রের প্রত্যুত্তরে একটি রসাল ছড়া রচনা করে পাঠান।
ছড়াটা এই রকম–
ডানাকাটা পরী
গাঁজাগুলি আকবরী,
হোমা-পেত্নী ধন্বন্তরি
ত্রয়ে নমস্করি
এত কহে পায়ে ধরি
শ্ৰী কুমুদ চৌধুরী।’
দ্বিজেন্দ্রলাল এই চিঠিগুলি সযত্নে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিভিন্ন ব্যক্তিগত লেখায় কবি দ্বিজেন্দ্ৰলাল এই পত্রগুলির উল্লেখ করেন।
রসিক দ্বিজেন্দ্রলালের কাছের মানুষজনরাও ছিলেন রীতিমত রসিক।
জানা যায়, ওই ভোজসভায় নিমন্ত্রিতদের অতি যত্নে আপ্যায়ন করে দ্বিজেন্দ্রলাল ভোজন করিয়েছিলেন।
Leave a Reply