তরুণ নাট্যকার
এক তরুণ নাট্যকার একদিন সকালে দেখা করতে এসেছেন। দ্বিজেন্দ্ৰলাল রায়ের সঙ্গে। তরুণ নাট্যকারটি কথায় কথায় তোষামোদ করতে থাকেন। দ্বিজেন্দ্ৰলালকে। তরুণ নাট্যকারের আবেগ এতটাই বেড়ে যায় যে তিনি দ্বিজেন্দ্রলালকে বলেন -’হে কবি, হে নাট্যকার, আপনি এদেশের একজন আদর্শ মহাপুরুষ। আমি আপনাকে যত ভক্তি করি, এজগতে আর কাউকে তেমন ভক্তি করি না। আমি আপনার লেখার গুনমুগ্ধ ভক্ত, আপনি আমাকে আপনার চরণে স্থান দিন……।’
পুজো পেতে অভ্যস্ত বা আগ্রহী ছিলেন না দ্বিজেন্দ্রলাল। তিনি বুঝেছিলেন এ ছোড়ার নিশ্চই কোনো ধান্দা আছে! আসলে তরুণ নাট্যকারটির তোষামোদের আসল উদ্দেশ্য ছিল দ্বিজেন্দ্রলালের সাহায্যে রঙ্গমঞ্চে তার একটা নাটক অভিনয়ের ব্যবস্থা করা। তরুণ নাট্যকারটি নিজের মুখেই এই ইচ্ছে প্রকাশ করেন। দ্বিজেন্দ্রলালের কাছে। সঙ্গে চলতে থাকে তোষামোদ। শেষমেষ অতিষ্ট দ্বিজেন্দ্রলাল বলেই ফেললেন, ‘কী বলেন মশাই! আপনি আমার চেয়ে আদর্শ পুরুষ খুঁজে পাননি? আপনি আমাকে যত ভক্তি করেন এত ভক্তি পৃথিবীতে আর কাউকে করেন না? আপনার বাবা-মা এখনও জীবিত, আপনি তাঁদের চেয়েও বেশি আমাকে ভক্তি করেন? আপনি যে এত নির্লজ, এমন অপদাৰ্থ তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি! উঃ কী জঘন্য তোষামোদ! কই দেখি আপনাকে একটা প্ৰণাম করি! —বলেই দ্বিজেন্দ্ৰলাল পরিস্কার ঘরের মেঝেতে সটান শুয়ে পড়ে সেই তরুণ নাট্যকারকে সত্যসত্যই সাষ্টাঙ্গে প্ৰণাম করলেন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বললেন, সত্যি আপনি মশাই ধন্য, আপনি ধন্য।’
তরুণ নাট্যকার লজ্জিত হলেন। অতিরিক্ত তোষামোদের ফল সুখের হল না। তিনি দ্বিজেন্দ্রলালের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে প্ৰণাম করে চলে গেলেন।
Leave a Reply