এক গ্লাস রস
রবীন্দ্ৰনাথ একদিন শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণের বারান্দায় বসে আছেন। সেই সময় শান্তিনিকেতনের শিক্ষক আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন কবির সঙ্গে দেখা করতে এলেন। দু’জনে বসে গল্প করছেন, এমন সময় কবির খাস ভূত্য বনমালী কবিকে একটা সুন্দর কঁচের গ্লাসে কিসের রস দিয়ে গেল, কবি তৃপ্তি ভরে সেই রস চুমুক দিয়ে খেতে লাগলেন। ক্ষিতিমোহন ভাবলেন, এ নিশ্চই দামী ফলের সরবত। কবির কী সৌভাগ্য, তিনি এই রস পান করছেন। ইস আমি বঞ্চিত হলাম। আমাকেও তো এক গ্লাস রস খেতে দেওয়া উচিত ছিল। এমন তো আগে কখনো হয়নি! খাদ্যরসিক ক্ষিতিমোহন লোভে পড়ে বারবার সেই গ্লাসের দিকে তাকাতে লাগলেন। কথা বলতে বলতে কবি বুঝতে পারলেন ক্ষিতিমোহনের মনের কথা। কবি তখন বনমালীকে বললেন, ‘শোন, এই বাবুকেও আমার মত পানীয় এনে দে, উনিও খাবেন, তাড়াতাড়ি আন।’
কবির কথা শুনে ক্ষিতিমোহন খুশি হলেন। কথামত বনমালী কবির মতই এক গ্লাস রস এনে ক্ষিতিমোনকে খেতে দিলো। মনে মনে উৎফুল্প ক্ষিতিমোহন গ্লাস হাতে নিয়েই চুমুক দিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মুখ বিকৃত হয়ে উঠল। কবি এবার হাসতে হাসতে বললেন, ‘কী হে ক্ষিতিমোহন, কেমন লাগল পানীয়? ওটা হচ্ছে নিমপাতার রস।’ কোনো উত্তর না দিতে পেরে ক্ষিতিমোহন চুপ করে রইলেন। কবি এইভাবে অনেকের সঙ্গেই মজা করছেন। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রকৃতই রসে টেটুম্বুর। তাঁর মত রসিক মানুষ সত্যিই খুঁজে পাওয়া ভার।
Leave a Reply