জোড়াসাঁকোর ভূত
রবীন্দ্রনাথ যখন শিলাইদহে পদ্মাবোটে স্ত্রী মৃণালিণী দেবীকে নিয়ে থাকতেন তখন এক বিধবা মহিলাকে রেখেছিলেন স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য। মহিলাটির একটা বাই ছিল, সে সব সময় পুরুষমানুষকে ভয় করত। কবির পদ্মাবোটে নানা লোকের যাতায়াত। আর সেটাই বড় সমস্যা মহিলাটির। এই আচরণে মনে মনে বিরক্ত হতেন মৃণালিণী দেবী। তিনি কবিকে তা জানান। কবি একদিন মহিলাটিকে বুঝিয়ে বলেন, ‘জগৎ থেকে পুরুষ জাতটাকে লুপ্ত করে দেবার ক্ষমতা আমাদের নেই। তোমাদের মত তাদেরও পৃথিবীতে থাকবার অধিকার আছে। আমি কী করতে পারি বল। তুমি এমন আচরণ কোরো না।’
তবে কাকে বোঝানো! সে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকে। ঐ কে এলো! ঐ কোন পুরুষের ছায়া-এই সব! তবে মহিলাটি একমাত্র পছন্দ করত বলেন্দ্রনাথকে। অন্যদিকে বলেন্দ্রনাথ তাকে দুচক্ষে সহ্য করতে পারত না। মেয়েটিকে মৃণালিণী দেবীর সাহায্যের জন্য রাখা। কিন্তু সে কোনো কাজই করে না। শুধু খায় দায় ঘুমোয়। কিছু কাজ করতে বললেই বলে, ‘এ কাজ করার জন্য আমি আসিনি, এসেছি নিজের উন্নতি করতে।’
কবি সব শুনে ভাবলেন, একে আর রাখা যাবে না, আগে তাড়াতে হবে। কিন্তু কী ভাবে!
একদিন কবি সপরিবারে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে গেলেন। সঙ্গে ঐ মেয়েটিও। সবাই মিলে তাকে তাড়াবার ছক করল। ভূতের ভয় ছিল মেয়েটির। তাকে থাকতে দেওয়া হল তেতলার ঘরে। গভীর রাতে তাকে ভয় দেখিয়ে সবাই নানা রকম শব্দ করত, কেউ ভূতের মুখোশ পরে ভয় দেখাত। এই সব কাণ্ড দেখে মেয়েটি চোঁচামেচি জুড়ে দিল, ‘ওবাবা, ওমা! এ যে ভূতের বাড়ি গো! এখানে আমি আর থাকতে পারব না।’
প্রচণ্ড ভয় পেয়ে সে পরের দিন কবি ও মৃণালিণীদেবীকে পোন্নাম করে নিজের পোটলা পুটলি নিয়ে পালিয়ে গেল।
সে বিদায় নিতে কবি ও মৃণালিণী দেবী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
Leave a Reply