বনমালীর উচ্চারণ
রবীন্দ্রনাথের খাসভৃত্য বনমালীর ভাষার সমস্যা ছিল। সে যেমন কেককে ক্যাক বলত, তেমন লম্বাকে বলত নাম্বা। কবি অনেক চেষ্টা করেন, কিন্তু কিছুতেই বনমালীকে দিয়ে সঠিক উচ্চারণ করাতে পারেন না। কবি তখন মংপুতে। ঘরে বসে কবিতা লিখছিলেন। এমন সময় মৈত্ৰেয়ী দেবীর প্রবেশ। মৈত্ৰেয়ী দেবীকে দেখেই কবি লেখা থামিয়ে হেসে বললেন, ‘কী ব্যাপার? আজি সমস্ত দিন যে দর্শন নেই, ছিলে কোথায়? লিশই একটা চৌকিতে নাম্বা হয়ে শুয়ে বালিশের ওপর চুল ফেলে দিয়ে প্রবাসী পড়তে পড়তে লিন্দ্ৰা দিচ্ছিলে?’
মৈত্ৰেয়ী দেবী কবির মুখে বনমালীর মত উচ্চারণ শুনে রীতিমত অবাক! বললেন, ‘এ কী, গুরুদেব, আপনি বনমালীর মত কথা বলছেন যে-‘
কবি হেসে বললেন, ‘কী আর করব বল, আমি ঠিক করেছি। এবার থেকে বনমালীর মত নাম্বা বলব। কতদিন থেকে আমি ওকে বোঝাচ্ছি। -ওরে নাম্বা নয়, লম্বা বল, কিন্তু কে কার কথা শোনো! ও যখন শুনবে না। তখন আমাকেই মেনে নিতে হবে ওর ভাষাটা! ঠিক করিনি?’
রবিকবির কথা শুনে কিছু বলতে যাবেন মৈত্ৰেয়ী দেবী, এমন সময় ঘরে ঢুকে বনমালী বলল, ‘গুরুদেব, নাম্বা নাম্বা বেগুন। এনেছি, বেগুনি ভেজে দেব, খাবেন?’ রবীন্দ্ৰনাথ মৈত্ৰেয়ী দেবীকে বললেন, ‘শুনলে কথা?’–বলেই কবি ও মৈত্ৰেয়ী দেবী হেঃ হেঃ করে হেসে উঠলেন। কিছু না বুঝে হাঁ করে তাকিয়ে রইল বনমালী।
Leave a Reply