বিশেষ পদ
শান্তিনিকেতনে এসেছেন এক বিশিষ্ট ভদ্রলোক। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে নিমন্ত্রণ করলেন। খাওয়ার জন্য। কবি এবং ঐ ব্যক্তি উভয়েই পাশাপাশি বসেছেন মধ্যাহ্নভোজনে। কবির ভৃত্য দুজনকেই একই খাবার খেতে দিয়েছে। অবশ্য কবি কম খান, কিন্তু অতিথি ভদ্রলোকের খাবার পরিমােন কিছু বেশি। অতিথি ভদ্রলোক খেতে খেতে দেখলেন কবিকে একটি পদ বেশি দেওয়া হয়েছে! ভদ্রলোক সেই পদটির দিকে বারবার তাকিয়ে দেখতে লাগলেন। মনে মনে ভাবলেন, কবি কেন একটি পদ বেশি খাচ্ছেন! কী পদ ওটি? নিশ্চই কোনো সুস্বাদু পদ! ইস, আমি বঞ্চিত হচ্ছি। ওই বিশেষ পদটি থেকে!
কবি বুঝতে পারলেন ভদ্রলোকের মনের কথা। ভদ্রলোকটি যেভাবে বারবার ঐ পদটির দিকে তাকাচ্ছেন তাতে যে কোনও মানুষেরই বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। কবি তখন তাঁর ভৃত্যকে ডেকে গভীর ভাবে বললেন, ‘আমি এসব পক্ষপাতিত্ব একদম পছন্দ করি না। যেহেতু আমি তোদের গুরুদেব, সেইজন্য টপ করে কিনা এই একটা পদ আমাকে বেশি দিয়ে দিলি। এই পদটা নিয়ে এসে ঐ বাবুকেও দে।’
ভূত্য বাটিভর্তি সেই বিশেষ পদ ভদ্রলোকটির খাবার থালার পাশে এনে রাখল। পদটি হাতে তুলে মুখে দিতেই ভদ্রলোক মুখ বেঁকিয়ে উঠলেন। রবীন্দ্ৰনাথ তখন হোসে বললেন, ‘কেমন লাগল পদটা? ওটা আরকিছু নয়, নিমপাতা বাটা, খান, খান—।’
ভদ্রলোকটি তখন হেসে ফেললেন এবং মনে মনে ভাবলেন, এই পদটির জন্য আমার মনে লালসা জেগেছিল, ইস!
Leave a Reply