বাক্যের আঘাত
শান্তিনিকেতনে একবার কবি জুরে আক্রান্ত। লেখালিখি বন্ধ। শুধুই বিশ্রাম। সেই সময় একদিন সকালে কয়েকজন বিহারী সাহিত্যিক এলেন কবির সঙ্গে দেখা করতে। ভূত্যের মুখে তাদের আসার খবর শুনে কবি বললেন, ‘কী করা যাবে, ওঁদের ডাকো, এতটা পথ এসেছেন, ফিরিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।’
ভূত্য তাঁদের নিয়ে এলেন কবির ঘরে। সেখানে কবির ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বসে। চারপাঁচজন বিহারী সাহিত্যিক তাঁদের লেখা বই কবির হাতে তুলে দিলেন এবং জানতে চাইলেন কবির অভিমত। এরপর তঁরা তাদের লেখা পাঠ করতে শুরু করলেন। কবি কী আর করেন, চুপ করে শুনতে লাগলেন। বিরক্ত হয়ে উঠলেন কবির ঘনিষ্ঠ লোকেরা। একজন শেষমেষ বাধ্য হয়ে বলেই বসলেন, ‘আপনারা থামুন, কবির জ্বর হয়েছে।’
কে কার কথা শোনো! বিহারী সাহিত্যিকরা এক একজন করে রচনা পাঠ করেই চললেন। তাদের থামানো দায়। এই ভাবে চলল দীর্ঘক্ষণ। অনেক পরে তাঁরা থামলেন এবং কবিকে প্ৰণাম করে চলে গেলেন। ছেড়ে দে মা কেঁদে বঁচি অবস্থা থেকে রেহাই পেয়ে রবীন্দ্ৰনাথ হেসে তার ঘনিষ্ঠদের বললেন, ‘বুঝলে, প্রায় জখম হবার দাখিল! তোমরা কখনো দেখছ বাক্যের আঘাতে দেহ ক্লিষ্ট হতে? আজি আমার তাই হল!’
কবির এ কথা শুনে তার ঘনিষ্ঠলোকেরা হেসে ফেললেন এবং কবিকে বিশ্রাম দেবার জন্য সকলে ঘর থেকে প্ৰস্থান করলেন।
Leave a Reply