কবির রান্না
রবীন্দ্রনাথ তার স্ত্রী মৃণালিণী দেবীকে ‘ভাই ছুটি’ বলে সম্বোধন করতেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি রবীন্দ্ৰনাথ স্ত্রীর সঙ্গে মাঝে মাঝেই রঙ্গ রসিকতায় মেতে উঠতেন। একদিন কবি তাঁর স্ত্রীকে ডেকে বললেন, ‘তোমরা কী আর রান্না করতে জান? আমি আজ তোমাদের একটা নতুন রান্না শেখাবো।’
মৃণালিণী দেবী শুনে বললেন, ‘তাই নাকি? কই দেখি কেমন রান্না!’
কবি গেলেন রাঁধতে। কী ভাবে?
কিছু আলু ও কড়াইশুটি সিদ্ধ করলেন। তারপর সেগুলোকে চামচের সাহায্যে ভালো করে মেশালেন এবং ছোট ছোট গুলি করলেন। শেষে সেই গুলিগুলোকে আধ কড়া ঘি-এ ভাজতে গেলেন। দূর থেকে সব লক্ষ্য করছিলেন মৃণালিণী দেবী। কবির আজব রন্ধন পদ্ধতি দেখে তিনি আর চুপ থাকতে না পেরে শেষমেষ বলেই ফেললেন,
‘এভাবে ভাজা যাবে না, ওতে কিছু বেসন দিতে হবে।’
রবীন্দ্রনাথ না-ছোড়, তর্ক জুড়ে দিলেন গিন্নির সঙ্গে, বললেন, ‘কেন হবে না? কই, না হবার তো কোনো কারণ দেখছি না!’
যতই গুলিগুলো কড়াইয়ের গরম তেলে ফেলেন, সেগুলো ততই ভেঙে চারদিকে ছড়িয়ে যেতে থাকল। এ দেখে হতাশ হলেন কবি। করুণ ভাবে তাকালেন স্ত্রীর দিকে। মৃণালিণী দেবী হেসে বললেন, ‘হল তো!’
এবার হেসে ফেললেন রবীন্দ্রনাথ, বললেন, ‘এই রকম হবার তো কোনো যুক্তিসঙ্গ ত কারণ ছিল না!’
এ কথা শুনে হেসে ফেললেন মৃণালিণী দেবী। তারপর বেসন দিয়ে সেই গুলিগুলোকে ভাল করে ভেজে খেতে দিলেন কবিকে।
রবীন্দ্রনাথ সেই ভাজা মুখে পুরে খেতে খেতে হাসি মুখে মৃণালিণী দেবীকে বললেন, ‘হ্যাঁ, এই হচ্ছে রান্না!’
Leave a Reply