দেমাকী
‘সাধারণী’ পত্রিকার সম্পাদক অক্ষয়চন্দ্র সরকার সহ অনেকেই রসিকতা করে। বঙ্কিমচন্দ্ৰকে ‘দেমাকী’ বলে টিটকারী দিতেন। তবে বঙ্কিমচন্দ্র রাগ করতেন না। তিনি বঙ্কিমচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায়ের রঙ্গ রসিকতা বলতেন, এক গুলির আড্ডায় আমার বইয়ের সমালোচনা হচ্ছিল। তাদের ধারনা বঙ্কিমচন্দ্ৰ নিশ্চই গুলি খায়, না হলে এমন রসিকতা কি তার হাত দিয়ে বের হয়।’
কথাটা যে তার উদ্দেশ্যেই বলা সেটা অক্ষয়চন্দ্ৰ বুঝলেন এবং আড্ডার আসরে হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমি না হয় গুলিখোর, কিন্তু আপনার দেমাকে যে দেশের মাটি কম্পমান!’
সেই আড্ডার আসরে বসেছিলেন কবি নবীনচন্দ্ৰ সেন। বঙ্কিমচন্দ্ৰ নবীনচন্দ্ৰকে বললেন, ‘কথাটা ভুল নয়, ঠিকই। বহরমপুরে থাকার সময় আপিসের কাজের পর বাড়ি ফিরে লেখাপড়ার সুযোগ একটুও পেতুম না। সবসময় বাড়িতে স্তাবকভক্তবৃন্দের ভিড়। তাদের জ্বালাতনে আমি অতিষ্ট হয়ে উঠি। যে-ই আসে হুঁকো নিয়ে বসে গালগল্পো জুড়ে দেয়। ব্যাস, লেখার দফারফা! কী করা যায়! কী ভাবে এদের হাত থেকে বাঁচা যায়! অনেক ভেবেচিন্তে বাড়ির দরজায় টাঙিয়ে দিলুম এক নোটিশ-কেউ আমার সাক্ষাৎ পাবেন না।
তারপর থেকেই বহরমপুরে আমার দেমাকী নাম ছড়িয়ে পড়ল। বাড়িতে কেউ আর জ্বালাতে আসতো না। আমি নিশ্চিন্তে আপিস থেকে ফিরে কাগজ-কলম নিয়ে বসে পড়তুম। সাহিত্যচর্চার ক্ষতি করে আমি কিছু করতে পারব না। তাতে লোকে আমাকে দেমাকী বললে আমার বয়েই গেল। কী বলো হে তোমরা?’
বঙ্কিমের কথাশুনে সবাই মাথা নাড়লেন।
Leave a Reply