কপালকুণ্ডলার জন্ম-কথা
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র তখন খুলনায় বদলি। একদিন তাঁর খুলনার বাড়িতে আড্ডায় মেতেছেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় দীনবন্ধু মিত্র ও শচীশ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। আড্ডার আসরে আলোচনায় উঠে আসছে সাম্প্রতিক সাহিত্য প্রসঙ্গ। বঙ্কিমচন্দ্র এমন সময় তাঁদের প্রশ্ন করলেন, ‘বলো দেখি, যদি শৈশব থেকে ষোলবছর পর্যন্ত কোন স্ত্রীলোক কাপালিকের দ্বারা বনের মধ্যে সমুদ্রতীরে পালিত হয় এবং কাপালিক ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মানুষের মুখ দেখতে না পায়, সমাজের সব কিছু যদি তার অজানা থেকে যায়, পরবর্তীকালে যদি দৈবক্রমে কেউ তাকে বিবাহ করে সমাজে নিয়ে আসে, তবে তার কী রূপ অবস্থা হবে বলে তোমাদের মনে হয়?’
প্রশ্ন শুনে দীনবন্ধু ও শচীশ মাথা চুলকাতে লাগলেন, ভাবলেন-এ আবার কেমন প্রশ্ন রে বাবা! কিন্তু রসিক সঞ্জীবচন্দ্ৰ হাসতে হাসতে বললেন, মনে করো মেয়েটির বিবাহ হল একটি গরীবের বাড়িতে, তাহলে সে নির্ঘাত চোর হবে। কারণ খুব পরিস্কার–বনে-জঙ্গলে সে ভালো খেতে পরতে পারতো না। সমাজে ভালো ভালো খাবার দেখে তার লোভ হওয়া স্বাভাবিক। গরীবের ঘরে খেতে না পেলে সে চুরিবিদ্যাই শিখবো। শুধু খাবার নয়, সাজপোশাক করার জন্য সে গয়নাও চুরি করতে পারে!’
সঞ্জীবচন্দ্রের এই কথা শুনে দীনবন্ধু ও শচীশ হেসে উঠলেন। হাসলেন বঙ্কিমচন্দ্রও। তবে এই উত্তর তাঁর খুব একটা পছন্দ হল না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই ঘটনার কিছু পরেই বঙ্কিমচন্দ্ৰ তাঁর অমর সৃষ্টি ‘কপালকুণ্ডলা’ রচনা করেন।
Leave a Reply