কলসী ও দড়ি
বঙ্কিমচন্দ্র তখন হুগলী জেলার ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট। তিনি সপরিবারে থাকেন চুঁচড়ায় ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে। তাই নিয়মিত বঙ্কিমচন্দ্ৰ ভুদেবের বাড়িতে আড্ডা দিতে যেতেন। এমনই একদিন দুজনের খোশগল্প হচ্ছে। এমন সময় বাঁশবেড়ে বা বংশবাটির জমিদার রায়বাহাদুর ললিতমোহন ও তার সঙ্গে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ মহেশচন্দ্র ন্যায়রত্ন এসে ঢুকলেন ঘরে। বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে ন্যায়রত্ন মহাশয়ের আলাপ ছিল না। কিন্তু ভূদেব ন্যায়রত্নমহাশয়ের বিশেষ পরিচিত ছিলেন। ভূদেব ন্যায়রত্নমহাশয়কে রসিকতা করে বললেন, ‘এদিকে বুঝি কোথাও শ্রাদ্ধ আছে? তাই বুঝি বিদায় মাঙতে এসেছেন?’
ন্যায়রত্ন উত্তরে বললেন, ‘না-না মশাই, ললিতবাবুর কামে একটা বৈষয়িক কাজে এসেছিলাম।
কথাটা সত্য হলেও ললিতমোহন তামাসা করার সুযোগ হাতছাড়া না করে বললেন, ‘বটে! এখনি দেব বামাল ধরিয়ে! গাড়িতে এখনো কলসী মজুত আছে!’
ন্যায়রত্ন মশাইয়ের গাড়িতে সত্যসত্যই তার একটা নতুন পিতলের কলসী ছিল। বঙ্কিমচন্দ্ৰ আর কতক্ষণ চুপ করে থাকতে পারেন?
তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ন্যায়রত্নমশাই, আপনি শ্রাদ্ধে এখনও যদি বিদায়ের কলসী গ্ৰহণ করেন, তবে সেই সঙ্গে একগাছি দড়িও নিতে ভুলবেন না! কারণ এই দড়ি-কলসী নিয়েই আলাপের সূত্রপাত হয় তাদের সঙ্গে! বঙ্কিমচন্দ্রের রসিকতা শুনে বাকি তিনজন একসঙ্গে হেসে উঠলেন।
Leave a Reply