হাফটোন ছবি
রামতনু লাহিড়ী ছিলেন ডিরোজিওর ইয়ং বেঙ্গল-এর অন্যতম সদস্য ও জ্ঞানান্বেষণ সমিতির সম্পাদক। সেই সময় সমাজে তার যথেষ্ট প্রভাব ছিল। তার পুত্ৰ শরৎকুমার লাহিড়ী ছিলেন প্রখ্যাত পুস্তক প্রকাশক। শরৎকুমারের প্রকাশনের একটি গ্রন্থে বঙ্কিমচন্দ্রের একটি হাফটোন ছবি প্রকাশ করার প্রয়োজন হয়। তখনকার দিনে এই দেশে হাফটোন ছবির ব্লক হতো না, আনতে হতো বিলেত থেকে। শরৎকুমার তার পিতা রামতনুকে পাঠান বঙ্কিমচন্দ্রের কাছ থেকে একটি ফটাে চেয়ে নিয়ে আসতে। কিন্তু ছবি ছাপার ব্যাপারে বঙ্কিম খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু সম্মানীয় ব্যক্তি রামতনুর অনুরোধ উপেক্ষই বা করেন কী করে! অনেক ভাবনাচিস্তা করে বঙ্কিমচন্দ্র রামতনুকে বললেন, আপনি কিছু দিন পরে আপনার পুত্ৰ শরৎকুমারকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। আমি বিবেচনা করে দেখব কী করা যায়।’
রামতনু এ কথা শুনে প্ৰস্থান করলেন।
কয়েকদিন পর শরৎকুমারের ডাক পড়ল বঙ্কিমচন্দ্রের কাছে। খুশি হয়ে এলেন শরৎকুমার। বঙ্কিমচন্দ্র শরৎকুমারের নামের সঙ্গেই শুধুমাত্র পরিচিত ছিলেন। আগে কখনো সাক্ষাৎ হয় নি।
শরৎকুমার বঙ্কিমচন্দ্রের সামনে নম্রভাবে এসে দাঁড়ালে বঙ্কিমচন্দ্র জিগ্যোস করলেন, ‘আপনার পরিচয়?’
শরৎকুমার হাসিমুখে বললেন, ‘আই অ্যাম মিস্টার এস. কে. লাহিড়ী।’
বঙ্কিমচন্দ্ৰ কৌতুহলবশত শরৎকুমারকে পুনরায় জিগ্যেস করলেন, ‘আপনি কী প্রয়োজনে আমার কাছে এসেছেন?’
শরৎকুমার বললেন, ‘আপনিই আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।’
বঙ্কিমচন্দ্ৰ এবার চিনতে পারলেন যে ইনিই রামতনুর পুত্র। তারপর গভীরভাবে বললেন, ‘আমি তো কোনো এস.কে লাহিড়ীকে চিনিনা। তাকে ডেকেও পাঠাইনি। তবে হ্যাঁ, শরৎকুমার লাহিড়ী বলে এক জনের আসার কথা ছিল বটে।’
নিজের অপরাধ বুঝে লজ্জা পেলেন শরৎকুমার। দোষ স্বীকার করে বঙ্কিমের কাছে নিজের ও পিতার পরিচয় দিলেন। তখন বঙ্কিমচন্দ্ৰ হেসে বললেন, তাই বলো, তুমিই শরৎকুমার, আমি কেমন করে এস.কে লাহিড়ীকে চিনবো?’
বঙ্কিমচন্দ্র আধুনিক চিন্তামনস্ক হয়ে ইংরেজি শিক্ষা গ্ৰহণ করলেও মনে প্ৰাণে ছিলেন খাঁটি বাঙালি।
Leave a Reply