বেয়াই-বেয়াই
বঙ্কিমচন্দ্র একবার এসেছেন সাহিত্যিক দামোদর মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। বঙ্কিমচন্দ্র যেখানে তঁর ভক্তের দল সেখানে। অর্থাৎ দামোদরের বাড়িতে সাহিত্যিকদের নিয়ে বসল একটি জমজমাট আডিড। সবাই যে যার চাটি-জুতো খুলে রেখেছেন ঘরের বাইরে। বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন সৌখিন ব্যক্তি। তিনি পরতেন শুড়তোলা চটি। সাহিত্য পাঠ ও আলোচনা জমে উঠেছে। সঙ্গে টুকটাক আহারাদি। দামোদর একটু বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়ে দেখেন খানিকটা জল কোথা থেকে গড়িয়ে এসে লেগেছে বঙ্কিমচন্দ্রের চটিতে। তা দেখে দামোদর ঘরে ঢুকে বঙ্কিমচন্দ্ৰকে বললেন, ‘ বঙ্কিম চট্টো ভেসে গেল।’
রসিক বঙ্কিমচন্দ্র চটজলদি জবাব দিলেন, ‘কোনদিকে হে? দামোদরমুখো বুঝি?’
কথা শুনে ঘরে হাসির রোল উঠল।
বেয়াই দামোদর মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে উৎসব উপলক্ষে আর একবার এসেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র। জমকালো আসর। নানা গুণী-মহারথীরা তাকিয়ায় হেলান দিয়ে হাঁকা হাতে আসর আলো করে বসে আছেন।
বঙ্কিমচন্দ্ৰকে দেখে বেয়াই দামোদর মুখোপাধ্যায় সকলের সামনে মজা করে বললেন, ‘ এসো বঙ্কিম চট্টো। (অর্থাৎ বঁকা চটি জুতো)।
রসজ্ঞ বঙ্কিমচন্দ্র প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘কোন দিকে হে বন্ধু, দামোদর মুখোয় বুঝি?’ (অর্থাৎ দামোদরের মুখে)। দুই বেয়াইয়ের সম্পর্ক ছিল বড়ই মধুর। দুজনেই সাহিত্যিক, তাই দেখা সাক্ষাৎ হলেই ঠাট্টা-রসিকতা চলত নিয়মিত। অন্যরা এই রসিকতা বেশ উভোগ করতেন।
আর একবার দামোদর শান্তি’ নামে এক উপন্যাস লিখে বঙ্কিমচন্দ্রকে উপহার দিলেন। উপন্যাস পড়ে বঙ্কিম মজা করে লেখেন–
প্রিয়তমেষু,
শান্তিপ্রাপ্ত হইলামা। ইহলোকে পাইলাম। পরলোকেও আশাকরি দামোদর বঞ্চিত করিবেন না।
ইতি
শ্ৰীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
তাং-২২শে আশ্বিন।
Leave a Reply