মিষ-টক
খাদ্যরসিক রবীন্দ্রনাথ মাঝে মাঝেই শান্তিনিকেতনে তাঁর আত্মীয় ও বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেন। আসলে রবীন্দ্ৰনাথ যেমন খেতে ভালবাসতেন, তেমন খাওয়াতেও ভালবাসতেন। কবিগুরুর খাসভৃত্য বনমালী এই খাবারের ব্যবস্থা করত। একবার গরমকালে রবীন্দ্রনাথের কাছে এসেছেন তাঁর আত্মীয় ও প্রথম যুগের চলচ্চিত্র অভিনেতা ধীরেন্দ্ৰনাথ গাঙ্গুলী। যিনি ডি.জি নামেও পরিচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ধীরেন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কাটে শান্তিনিকেতনেই। তিনি বালক বয়সেই অভিনয়, সংগীত, অঙ্কন, যন্ত্রবাদনে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। উনি রবীন্দ্ৰনাথের কাছে শিক্ষাপ্রাপ্ত হন ও ‘বাল্মিকী প্ৰতিভা’ নাটকে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অভিনয় করেন। রবীন্দ্ৰনাথ হয়েছিলেন বাল্মিকী, ডি.জি হয়েছিলেন মায়া। ধীরেন্দ্রনাথ প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের সম্পূর্ণ বাংলা ছবি ‘বিলেত ফেরত’ তৈরী করেন। ১৯২১ সালে ২৬ ফ্রেব্রুয়ারি ভবানীপুরের রসা থিয়েটারে ছবিটি মুক্তিলাভ করে। এই ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেন ডি. জি। রবীন্দ্ৰনাথ ধীরেন্দ্রনাথকে বিশেষ স্নেহ করতেন। তাই তিনি আসায় বিশেষ ভোজনের ব্যবস্থা করা হল। বনমালী বাজার থেকে আমি কিনে আনল। কবি ও ডি.জি একসঙ্গে খেতে বসেছেন। আম খেতে শুরু করে ধীরেন্দ্রনাথের মুখটা বিকৃত হয়ে গেল। রবীন্দ্ৰনাথ ব্যাপারটা আন্দাজ করে বললেন, ‘কী ধীরু, আমাটা মিষ্টি তো?’
কী আর বলেন ধীরেন্দ্ৰনাথ! তিনি চুপ করে হাসলেন। বনমালী সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি মিষ্টি, আমি চাখিয়ে নিয়ে তবে কিনেছি। মিষ্টি না হওয়ার কারণ নেই।’
রবীন্দ্ৰনাথ এবার হেসে বললেন, ‘আসলে বনমালী যাকে দিয়ে আম চাখিয়েছে সে আমওলারই লোক। আম চেখে সে নিশ্চই বলেছিল মিষ-টক। আর বনমালী শুনেছে মিষ্ট। ওর আর কী দোষ?’
রবীন্দ্ৰনাথের এই কথা শুনে ধীরেন্দ্ৰনাথ হেসে ফেললেন।
Leave a Reply