দণ্ডনিও
গুরুদেব রবীন্দ্ৰনাথ একদিন শান্তিনিকেতনের শিক্ষক নেপাল রায়কে একটি চিঠি লিখলেন–‘কাল বিকেলে আমার এখানে এসো ও চা পান করে দণ্ড নিও।’
চিঠি হাতে পেয়েই নেপাল রায়ের চক্ষু চড়কগাছা! গুরুদেব এমন কেন লিখলেন? চা পান না হয় ঠিক আছে, কিন্তু দণ্ড নেওয়ার কথা লিখলেন কেন! কী এমন অপরাধ হল রে বাবা! সত্যিই কি শাস্তি পাওয়ার মত কিছু হয়েছে! চিন্তায় পড়লেন নেপাল রায়। তাঁর চোখ মুখ শুকিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেল! সারারাত ঘুমোতে পারলেন না। এই কথা ভেবে। গুরুদেব অসন্তুষ্ট হওয়া মানে আর শান্তিনিকেতনে শিক্ষকতা করা যাবে না, থাকাও যাবে না!
পরের দিন বিকেলে নেপাল রায় গুরুদেবের সঙ্গে দেখা করলেন। রবীন্দ্ৰনাথ তখন উত্তরায়ণে, কবিতা লিখছিলেন। রবীন্দ্ৰনাথ নেপাল রায়কে দেখে লেখা থামিয়ে গভীর ভাবে বললেন, ‘বোসো, কথা আছে।’
নেপাল রায় আরও ভয় পেয়ে গেলেন। এরপর রবীন্দ্ৰনাথ স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতে লাগলেন। এর মধ্যে আরো অনেকে এসে হাজির। রবীন্দ্রনাথের ভূত্য টেবিলে চা-এর সাথে লোভনীয় খাবার রেখে গেল। রবীন্দ্রনাথ সকলকে খেতে বললেন। সবাই খাবার তুলে খেতে শুরু করলেন। কিন্তু ভোজন রসিক নেপাল রায় খেতে পারলেন না। খাবেন কী করে? তার বুকের মধ্যে ভয় লুকিয়ে রয়েছে যে! এইভাবে অনেকক্ষণ কেটে গেল। রাতও হল অনেক। কিন্তু রবীন্দ্ৰনাথ শাস্তির কথা বলছেন না। নেপাল রায় খাবারে হাত দেননি দেখে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘তুমি তো কিছুই খেলে না। তাছাড়া আজকাল তোমার বডড ভুল হচ্ছে।’
এই বলে গভীর হয়ে রবীন্দ্ৰনাথ ভেতরে চলে গেলেন। সবার সামনে আরো ভয় পেয়ে গেলেন নেপাল রায়! ভুল হবার কথা কী বললেন গুরুদেব! এরপর রবীন্দ্রনাথ ভেতর থেকে একটা মোটা লাঠি এনে নেপাল রায়ের হাতে দিয়ে বললেন, ‘নেপাল, এই নাও তোমার দণ্ড, সেদিন এখানে এসে ভুল করে ফেলে গেছি।’
এই কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন নেপাল রায়। ভাবলেন-গুরুদেব তাহলে এই দণ্ড পাওয়ার কথাই লিখেছিলেন। তারপরে আফশোস করলেন—ইস্, ভয় পেয়ে চা-পান ও লোভনীয় খাবার থেকে বঞ্চিত হলাম!
Leave a Reply