জোড়াসাঁকো নয়
রবীন্দ্ৰনাথ কিছুদিন শিলাইদহে পদ্মা নদীর ওপর বজরায় বাস করেন। নদীর চরের গায়ে পাশাপাশি বাঁধা দুটি বজরা। মনোরম পরিবেশ, সাহিত্যচর্চার জন্য এর থেকে ভাল জায়গা আর কী হতে পারে! দুটি বজরার একটিতে রবীন্দ্রনাথ, অন্যটিতে শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক অজিতকুমার চক্রবর্তী থাকেন। অসুস্থ অজিতকুমার স্বাস্থ্যোদ্ধারের আশায় এসেছেন এখানে।
ঔপন্যাসিক চারুচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই সময় শিলাইদহে আমন্ত্রণ জানান কবিগুরু। গুরুদেবের আমন্ত্রণ–তাই সঙ্গে সঙ্গেই এসে গেলেন চারুচন্দ্ৰ। তার থাকার ব্যবস্থা হলো অজিতকুমারের বজরায়। অজিতকুমারের বজরায় নিজের জিনিসপত্র রেখে চারুচন্দ্ৰ প্ৰণাম করতে এলেন গুরুদেবকে। গুরুদেবকে তখন মন দিয়ে একটি বই পড়ছিলেন। চারুচন্দ্ৰকে দেখে খুশি হলেন রবীন্দ্রনাথ। গুরুদেবকে প্ৰণাম করে চারুচন্দ্ৰ অজিতকুমারের বজরায় যাবার জন্য পা বাড়ালেন। পাশাপাশি দুটি বজরায় যাতায়াতের জন্য এক বজরা থেকে অন্য বজরা পর্যস্ত একটা লম্বা শক্তিপোক্ত তক্তা পাতা। চারুচন্দ্ৰ অজিতকুমারের বজরায় যাবার জন্য সেই তক্তায় পা দিতেই রবীন্দ্রনাথ হেসে বললেন, ‘চারু, তক্তার ওপর দিয়ে খুব সাবধানে যেও, মনে রেখ, এটা জোড়াসাঁকো নয়, এক সাঁকো।’
কবির এই কথা শুনে চারুচন্দ্ৰ হেসে ফেললেন।
Leave a Reply