কুঁজোর জল
সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় বা বনফুল একবার ভাগলপুর থেকে শান্তিনিকেতনে এসেছেন। রবীন্দ্ৰনাথের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। রবীন্দ্ৰনাথ তখন আছেন উত্তরায়ণে। বনফুল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এগারোটার সময় দেখা করতে এলেন। বনফুল ঘরে ঢুকে দেখলেন রবীন্দ্রনাথ একটা বিরাট ঘরে বিরাট টেবিলে ঝাঁকে মন দিয়ে লিখে চলেছেন। কোনো দিকে ভ্ৰক্ষেপ নেই। বনফুল অনেকক্ষণ চুপ দাঁড়িয়ে রইলেন। ডেকে কবিকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। লিখতে লিখতে এক সময় রবীন্দ্রনাথই মুখ তুলে দেখলেন সামনে বনফুল দাঁড়িয়ে। বনফুলকে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘কখন এলে? বোসো, আমার লেখাটা এক্ষুণি শেষ হয়ে যাবে।’
বনফুল বসলেন। রবীন্দ্রনাথ লেখা শেষ করে বললেন, ‘হাঁ, বল কী খবর?’
বনফুল করজোড়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘গুরুদেব, অত ঝুঁকে লিখতে আপনার কষ্ট হয় না? আজকাল তো দেখি কতরকম চেয়ার বেরিয়েছে, তাতে ঠেস দিয়ে বসে আরাম করে লেখা যায়।’
বনফুলের কথা শুনে পরিহাসপ্রিয় রবীন্দ্রনাথ মুচকি হেসে বললেন, ‘জানি, সব রকমের চেয়ারই আমার আছে। কিন্তু না ঝুঁকে লিখলে লেখা বেরোয় না যে! আসলে কুঁজোর জল কমে গেছে তো, তাই উপুড় করতে হয়।’
গুরুদেবের মুখে এ কথা শুনে বনফুল হেসে ফেললেন।
Leave a Reply