স্নানপর্ব
রায় বাহাদুর কালিপ্ৰসন্ন ঘোষ ছিলেন ‘বান্ধব’ পত্রিকার সম্পাদক। তিনি একবার এসেছেন বিদ্যাসাগরের বাড়িতে। গৃহস্বামী বিদ্যাসাগর অতিথির আপ্যায়নের ত্রুটি রাখলেন না। বিভিন্ন পদের খাবার রান্না হল কালিপ্ৰসন্নর জন্য। কালিপ্ৰসন্ন স্নান করবেন। এই সময় বিদ্যাসাগর একটু রসিকতা করার সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। বাড়ির কাজের লোকটিকে ডেকে বললেন, ‘ওহে শোনো, আজ বাড়িতে যে বাবুটি এসেছেন, তিনি লোক ভাল, তবে মাথায় ছিট আছে। একটু বেশি জল তাঁর মাথায় ঢাললেই তিনি তোমায় জল ঢালতে বারণ করে দিতে পারেন। কিন্তু সাবধান! তুমি তঁর কথায় কান দেবে না। বরং আরো বেশি বেশি জল ঢালতে থাকবে। বুঝলে ?’
এতো গেল একদিক। এবার বিদ্যাসাগর কালিপ্ৰসন্নকে আলাদা ডেকে বললেন, ‘মশাই, আমার চাকরিটা এমনিতে বেশ ভাল, কিন্তু তার একটাই বাতিক–কাউকে স্নান করাতে হলে তার মাথায় খুব বেশি জল ঢালে। যদি বারণ করা হয় তাহলে সে আরো বেশি বেশি জল ঢালতে থাকে। আপনি দয়া করে একটু সহ্য করে নেবেন।’
এবার শুরু স্নানপর্ব। কালিপ্ৰসন্ন স্নান করতে এলেন। চাকরটি খুব জল ঢালছে দেখে তিনি বিরক্ত হয়ে চাকরীটিকে বললেন, ‘এত জল ঢালছ কেন ?’
কালিপ্ৰসন্ন তাকে বেশি জল ঢালতে নিষেধ করলেন, কিন্তু চাকরীটি ভাবল, সত্যিই বুঝি বাবুর মাথায় ছিট আছে! এই ভাবা মাত্র সে কালিপ্ৰসন্নর মাথায় আরো জল ঢালতে লাগল। এদিকে চাকরের জল ঢালা দেখে কালিপ্ৰসন্ন ভাবলেন, বিদ্যাসাগরমশাই ঠিকই বলেছেন, চাকরের তাহলে জল ঢালা বাতিক আছে!
চাকরের জল ঢালা নিয়ে কালিপ্ৰসন্নার নাস্তানাবুদ অবস্থা দেখে বিদ্যাসাগর হেসে কুটিকুটি।
Leave a Reply