কবির সুহৃদ
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগরের সুহৃদ। মাইকেল মধুসূদন দত্ত একসময় খুবই আর্থিক অনটনে পড়েছিলেন। তখন তিনি বিদেশে। বিদেশে অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন কবি, এই খবর কানে এল বিদ্যাসাগরের। তিনি শুধু বিদ্যাসাগর নন, দয়ারসাগারও। মাইকেলের দুর্দশার কথা শুনে তঁর মন কেঁদে উঠল। কবি বন্ধুর দুদিনে বিদ্যাসাগর মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে দিতেন।
এই খবর পেয়ে একদিন এক ভদ্রলোক বিদ্যাসাগরের কাছে এসে বললেন, ‘পণ্ডিতমশাই, আপনি নাকি মধুসূদনকে টাকা পাঠাচ্ছেন?’
বিদ্যাসাগর বললেন, ‘হ্যাঁ পাঠাচ্ছি।’
ওই ব্যক্তি বললেন, ‘ওকে টাকা পাঠান কেন ?’
বিদ্যাসাগর বললেন, ‘ওর টাকার দরকার বলেই পাঠাই।’
ব্যক্তিটি এবার বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘আপনি কি জানেন, মধুসূদন ওই টাকা দিয়ে কী করবে ?’
বিদ্যাসাগর বললেন, ‘হ্যাঁ জানি তো, ও মদ খাবে।’
ব্যক্তিটি বলে উঠলেন, ও মদ খাবে জেনেও আপনি ওকে টাকা দিচ্ছেন ?’
বিদ্যাসাগর উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ জেনেও দিচ্ছি।’
ব্যক্তিটি কিঞ্চিৎ রেগে বললেন, ‘আপনি তাহলে মদ খাওয়ার জন্য টাকা দেন ?’
বিদ্যাসাগর মাথা নেড়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, দিই, তবে জায়গা বিশেষে।’
ব্যক্তিটি এবার উৎসাহিত হয়ে বললেন, ‘আমি যদি মদ খাই আমাকেও টাকা দেবেন ?’
বিদ্যাসাগর বললেন, ‘নিশ্চই দেব, নিশ্চই দেব।’
ব্যক্তিটি দ্বিগুণ উৎসাহে বললেন, ‘কই টাকা দিন তাহলে -‘
বিদ্যাসাগর হেসে বললেন, ‘তোমাকে মদ খাওয়ার জন্য টাকা তো দেবী, তার আগে তুমি একটা ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ লেখ দেখি।’
জবর জবাব পেয়ে ভদ্রলোকটি আর বিদ্যাসাগরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস পেলেন না।
Leave a Reply