বাঁধানো বই বনাম দামী শাল
ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগরের সখ ছিল বইপত্র ভালো করে বাঁধিয়ে রাখা। যাতে বই নষ্ট না হয়ে যায়, তাই এত যত্নে রাখতেন ।
একবার এক ধনীব্যক্তি এসেছেন বিদ্যাসাগরের কাছে। তার ইচ্ছা, বিদ্যাসাগরের বইগুলি একবার দেখবেন। এই ইচ্ছা প্ৰকাশ করা মাত্র বিদ্যাসাগর তার বইগুলি দেখার অনুমতি দিলেন। প্রত্যেকটি বই বঁধানো। প্রচুর খরচ করেই বঁধানো। ধনীব্যক্তিটি
‘পন্ডিতমশাই, এত টাকা খরচ করে বইগুলি বাধানের কী দরকার?’
বিদ্যাসাগর ঐ ব্যক্তির কথায় হেসে বললেন, ‘কেন, দোষ কী ?’
ব্যক্তিটি বললেন, ‘ভেবে দেখুন, ঐ টাকায় অনেকের উপকার হতে পারত। আপনি কী বলেন?’
বিদ্যাসাগর সব শুনে নিজের খদ্দরের চাদরটা গায়ে ভাল করে মুড়ি দিয়ে গম্ভীর হয়ে ধনী ব্যক্তিটিকে বললেন, ‘মশাই, আপনার গায়ের শালটা কিন্তু বেশ সুন্দর! কোথা থেকে কিনেছেন ? দাম কত ?’
ব্যক্তিটি বিদ্যাসাগরের প্রশ্নের উত্তরে সগর্বে বললেন, ‘শহর থেকে পাঁচশো টাকা দিয়ে শালটি কিনেছি’–ব’লে উৎফুন্ন হয়ে শালের গুণকীর্তন শুরু করলেন।
বিদ্যাসাগর ব্যক্তিটিকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘সবই তো বুঝলাম। পাঁচসিকে কম্বলেও তো শীত কাটে। এই দেখুন না, আমিই তো খন্দরের মোটা চাদর গায়ে দিই। এই চাদরের দাম খুব কম। কী দরকার পাঁচশো টাকা দামের শাল গায়ে দেবার ? এই টাকাতেও তো অনেকের উপকার হতে পারত। নয় কি ?’
বিদ্যাসাগরের রসিকতাসুলভ তীর্যক মন্তব্যটি বুঝতে পারলেন ধনীব্যক্তিটি। লজ্জায় তাঁর মুখ রাঙা হয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাঁধানো বইগুলি যথাস্থানে রেখে মাথা নিচু করে দরজার দিকে পা বাড়ালেন।
Leave a Reply