ইভান সের্গেইয়েভিচ পদকোন্নিকভ বসে ছিলেন আর্মচেয়ারে। তাঁর হাতে একটি পত্রিকা। হাসির গল্প পড়ছিলেন তিনি। পড়তে পড়তে একসময় কপাল কুঁচকে গেল তাঁর।
‘রাবিশ! কী লিখেছে এসব! এটা নাকি আবার হাসির গল্প! পড়ে তো কান্না পেয়ে যাচ্ছে। অথচ এসব লিখেই নাকি টাকাও পায় লেখকেরা! আরে আমিও তো… শুধু আমি কেন, যে কোনো গবেটও এর চেয়ে মজাদার হাসির গল্প বানাতে পারবে।’
ইভান সের্গেইয়েভিচ একটু শান্ত হলেন। তারপর ওল্টালেন পত্রিকার পাতা। পরের পাতায় লেখা: ‘শ্রেষ্ঠ হাসির গল্প রচনা প্রতিযোগিতা। উৎসাহী সবাইকেই অংশ নিতে আহ্বান জানানো হচ্ছে। পুরস্কার ৩০০ রুবল।’
নড়েচড়ে বসলেন ইভান সের্গেইয়েভিচ। মাথার পেছন দিকটা চুলকালেন, ‘আরিব্বাপরে! ৩০০ রুবল! মানে নতুন একটা টেলিভিশন!’
ঘরের কোণের দিকে তাকিয়ে কল্পনা করলেন, পুরোনো টিভির জায়গায় নতুন টিভি। তারপর ভাবলেন, ‘দেখব নাকি চেষ্টা করে?’
তাঁর মনে পড়ল, একবার পাশের বাসার ত্রফিমভ তার জমানো শূন্য বোতলগুলো বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল হুড়মুড় করে।
‘এ ঘটনাই গল্পে বর্ণনা করবো।’ সিদ্ধান্ত নিলেন ইভান সের্গেইয়েভিচ।
‘একদিন পাশের বাসার ত্রফিমভ তার জমানো শূন্য বোতলগুলো বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় পা পিছলে পড়ে গেল হুড়মুড় করে।’ মন দিয়ে লিপিবদ্ধ করে ইভান সের্গেইয়েভিচ দাঁড়ি বসালেন বাক্যের শেষে। তারপর লেখা বাক্যটি পড়লেন, চেষ্টা করলেন হাসতে, কিন্তু হাসি পেল না।
‘এর মানে কী!’ নিজের ওপরেই রাগ হলো তাঁর। ‘ঘটনাটা তো খুবই মজার ছিল! নাকি আমি, মানে লেখক মজা পাচ্ছে না? অন্য কেউ পড়লে নিশ্চয়ই গড়িয়ে পড়বে হাসতে হাসতে।’
স্ত্রীকে ডাকলেন তিনি।
‘ডাকছ কেন?’ রান্নাঘর থেকে ভেসে এল স্ত্রীর কণ্ঠ।
‘পত্রিকায় একটা হাসির গল্প পড়লাম।’ স্ত্রী ঘরে ঢুকলে ইভান সের্গেইয়েভিচ একটু মিথ্যা কথা বললেন। ‘পড়ে শোনাই তোমাকে।’ বলে গলা খাঁকারি দিয়ে বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে শুরু করলেন তিনি, ‘একদিন পাশের বাসার ত্রফিমভ তার জমানো শূন্য বোতলগুলো বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় পা পিছলে পড়ে গেল হুড়মুড় করে।’
পড়া শেষ করে ইভান সের্গেইয়েভিচ অপেক্ষা করলেন খানিকক্ষণ। স্ত্রী হাসলেন না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।
‘কেমন লাগল তোমার?’ সসংকোচে জিজ্ঞেস করলেন তিনি। ‘পছন্দ হয়েছে?’
‘রাবিশ!’ স্ত্রী উত্তর দিলেন।
‘তুমি কি জানো,’ দ্বিতীয়বারের মতো অপমানিত ইভান সের্গেইয়েভিচ বললেন, ‘এই গল্পের জন্য লেখককে টেলিভিশন উপহার দেওয়া হয়েছে?’
‘টেলিভিশন নয়, ঘাড় ধাক্কা দেওয়া উচিত ছিল তাকে,’ বিড়বিড় করে বললেন স্ত্রী।
কেঁপে উঠলেন ইভান সের্গেইয়েভিচ। নিজের অজান্তেই ঘাড় স্পর্শ করল তাঁর একটা হাত। ঘরের কোণের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘আমাদের টেলিভিশনটা পুরোনো হলেও নতুনের চেয়ে ভালো কাজ করে, তাই না?’
সংকলন ও অনুবাদ: মাসুদ মাহমুদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১২, ২০১২
Leave a Reply