দেশে মহারাজকে সকলে অনুনয় করে জানাল, মহারাজ একটি দাতব্য চিকিৎসালয় তৈরি করে দিতে হবে। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র অচিরে দাতব্য চিকিৎসালয়ের বাড়ি তৈরি করলেন। এই চিকিৎসালয়ের জন্য বৈদ্য নির্বাচনের ভার গোপালের উপর ছেড়ে দিলেন। বললেন, কি হে গোপাল, উপযুক্ত একজন বৈদ্য নির্বাচন করতে পারবে তো? মনের মত ভাল বৈদ্য না পেলে কিন্তু চিকিৎসালয় বন্ধ করে দেব সে কথা যেন মনে থাকে।
গোপাল মাথা নেড়ে বলল, আমার ওপর ভরসা রাখুন, নিবাচনে ভুল না হয় তার ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করার চেষ্টা করব। দলে দলে বৈদ্যরা গোপালের সঙ্গে দেখা করতে এলো। কারণ গোপালের উপর বৈদ্য নির্বাচন করার ভার পড়েছে। গোপাল যাকে ভাবকে তাকে নেবে। সেটা মহারাজ মেনে নেবেন। গোপাল তাদের সকলকে বললে, রাজা আমার উপর বৈদ্য নির্বাচনের ভার দিয়েছেন বটে, কিন্তু উপযুক্ত রাজবৈদ্যের সন্ধান পাওয়া খুবই মুশকিলের ব্যাপার। কথায় আছে শতং মারি ভবেৎ বৈদ্য। সুতরাং বেশি রোগি না মারলে রাজবৈদ্য হওয়া যায় না। অতএব, আপনারা এখন বলুন কার হাতে কত বেশি- রোগি চিকিৎসা বিভ্রাটে পটল তুলেছে। সকরে যে যার রোগি মারার কথা তাই ফলাও করে বলতে লাগল।
গোপালের কথা শুনে একজন বৈদ্য বিশেষ উৎসাহিত হয়ে বললে, আমি এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার রোগি দেখেছি- তার মধ্যে দেড় হাজার রোগিই ভুল চিকিৎসার জন্য মারা গেছে। অতএব, রাজবৈদ্য হিসাবে নির্বাচিত হবার জন্য আমি নিজেকে উপযুক্ত মনে করি। একজন বৈদ্য বললে, ভুল চিকিৎসা চালিয়ে আমি আরও বেশি রোগি মেরেছি। আমি এ পর্যন্ত ছয় হাজার রোগী দেখেছি যার মধ্যে তিন হাজার রোগিই আমার চিকিৎসার গুনে মারা গেছে। আর একজন বলল, তার দুহাজারের মধ্যে দেড় হাজার রোগিই খরচের খাতায় গেছে। আর একজন বুক ফুলিয়ে বললে, আমি এ পর্যন্ত আট হাজার রোগি দেখেছি, তার মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার রোগিই আমার হাত যশ আর তাদের কপালের গুনে মারা গেছে। একজন বৈদ্য উৎফুল্ল হয়ে বললে, গোপালবাবু আমিই রাজবৈদ্য পদ্প্রার্থীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত হতে পারি- কারণ এ পর্যন্ত আমি মাত্র বিশজন রোগির চিকিৎসা করেছি তার মধ্যে বিশ জনই আমার চিকিৎসার কল্যানে সকাল সকাল টেসে গেছে।
মাঝবয়েসী একজন বৈদ্য কোন কথা না বলেই চুপি চুপি স্থান ত্যাগ করেই চলে যাচ্ছিলেন, গোপাল দেখতে পেয়ে তাঁকে ডেকে বললে, আপনি যে কোন কথা না বলেই চলে যাচ্ছেন? আপনার বক্তব্য শুনলে আমরা আনন্দিত হব। আপনি কত রোগি মেরেছেন? আপনার হিসেব না দিয়ে চলে যাচ্ছেন কেন?
কবিরাজ মশাই হতাশ হয়ে বললেন, আমি আর এখানে থেকে কি করতে পারি বলুন? আমার পক্ষে রাজবৈদ্য নির্বাচিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই দেখছি। কারণ এ পর্যন্ত আমি বিশ হাজার মত রোগিকে চিকিৎসা করেছি- কিন্তু তার মধ্যে পচিঁশটার বেশি রোগিকে মারতে পারিনি। তবে কি করে আমি এ কাজ পাওয়ার ভরসা পাব বলুন। আমার একমাত্র চেষ্টা রোগিকে ভাল করা।
সেই কবিরাজের কথা শুনে গোপাল মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কানে কানে বললে, মহারাজ ইনিই রাজবৈদ্য হওয়ার উপযুক্ত। আপনি ওকেই রাজবৈদ্য নিযুক্ত করুন মহারাজ। এর মত উপযুক্ত লোক একজনও নেই আমাদের এই রাজ্যে।
গোপাল এই রকম অভিনব পদ্ধতিতে রাজবৈদ্য নির্বাচন করায় মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র খুবই খুশি হলেন। ওই বিজ্ঞ কবিরাজই রাজবৈদ্য নির্বাচিত হওয়ার ফলে জনসাধারণের মহোপকার হল।
পূর্ববর্তী:
« রাজপুত্রের ছবি
« রাজপুত্রের ছবি
পরবর্তী:
রাজমুকুট »
রাজমুকুট »
Leave a Reply