মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র অনেকদিন থেকেই ভাবছিলেন গোপালকে কোনদিন কি ঠকানো যাবে না? যদি যায় তবে কিভাবে গোপালকে জব্দ করা যায়। কিন্তু গোপাল যে রকম চালাক তাকে সহসা জব্দ করা সম্ভব নয় কারও পক্ষে। কথায় বলে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। শেষে একদিন মহারাজ ভাবতে ভাবতে গোপালকে জব্দ করার একটা উপায় বের করে ফেলেন মনে লাগার মত। গোপালকে রাজসভায় ঢুকতে দেখেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, গোপাল আজ তোমার আসতে একটু দেরি হয়েছে। যাইহোক, কালরাতে আমি একটা অদ্ভূত স্বপ্ন দেখে উতলা আছি গোপাল। শুনবে নাকি? যদি শুনতে চাও তো বলি। তোমার কাছে স্বপ্নটা এতক্ষণ না বলতে পেরে আমার পেট যেন ফেঁপে যাচ্ছে-
গোপাল বললে, বলুন-না মহারাজ। আপনি কি স্বপ্ন দেখছেন? বলুন স্বপ্ন বৃত্তান্ত শোনা তো আমাদের সৌভাগ্যের কথা।
তবে শোন। স্বপ্নে কি দেখলুম জানো গোপাল, তুমি আর আমি এ অচেনা অজানা জায়গায় বেড়াতে গেছি। আশেপাশে কোন লোকজন নেই। দুপাশে শুধু বিরাট দীঘি। আর মাঝখানে দিয়ে পায়ে চলার পথ, তাও চওড়া নয়। একটা দিঘী ক্ষীরের আর একটা দিঘীশুয়ের। তুমি আর আমি সেই সরু পথ ধরে যাচ্ছিলুম। তুমি পা ফসকে একেবারে গুয়ের দিঘিতে গিয়ে পড়লে। আমি পড়লুম ক্ষীরের দীঘিতে তারপরেই আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। এ যে কি স্বপ্ন আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। স্বপ্ন কি সত্য হয়?
স্বপ্নের বিবরণ শুনে একমাত্র গোপাল ছাড়া সভাস্থ সকলেই হো হো করে হেসে উঠল। সকলেই ভাবলে, গোপাল এবার জব্দ হয়েছে। গোপালের এবার বলার কিছুই নেই, গোপাল আচ্ছা জব্দ হোল, আজ এই মনে করে সকলে রাজসভা সকচিত করে হা হা হো হো করে হাসতে লাগলো।
রাজসভার একজন রসিক লোক আবার ঠাট্টা করে গোপালকে জিজ্ঞোস করলেন, দেখ তো বাপু, তোর গায়ে গুটু লেগে আছে বলে মনে হচ্ছে, সেজন্য এখানে বেশ নোংরার খোশবু বেরুচ্ছে মনে হচ্ছে। ভাল করে ধুয়ে আসনি।
গোপাল মুখ ব্যাজার করে মহারাজকে বললে, আমিও ঠিক একই স্বপ্ন দেখছি পরশু রাত্রে হুজুর। তবে আমর স্বপ্নে আরও কিছু আছে আর কি। অর্থাৎ আপনি ক্ষীরের আর আমি গুয়ের দীঘিতে পা ফসকে পড়ে যাই। এই স্বপ্ন বলার জন্য আমার মন আকু-পাকু করছিল, কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছিলাম না। যা দেখেছেন সঠিক এ স্বপ্নের ভুল ভ্রান্তি নাই।
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র উৎফুল্ল হয়ে বললেন, তা হলেই বোঝ তুমিও সেই একই স্বপ্ন দেখেছ- অর্থাৎ তুমি দেখেছ যে তুমি গুয়ের দীঘিতে পা ফসকে পড়ে গেছ। কি বল? ঠিক কি না?
হ্যাঁ মহারাজ। একই স্বপ্ন একদিন আগে দেখেছি, তবে ওই যা বলেছি, আরো কিছু বেশি দেখেছি আমি সেদিন স্বপ্নে। এই কথা শুনে সভাস্থ সকলে আবার হো হো করে হাসিতে ঢলে পড়ল।
কিছুক্ষণ পরে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, তুমি আর কি দেখেছ? বল তোমার স্বপ্ন বৃত্তান্ত? আমার শুনতে খুব ইচ্ছে করছে।
আমি আরও যা দেখেছি যদি কোন দোষ ত্রুটি না ধরেন এবং অনুমতি দেন, স্বপ্নের বাদবাকি কথা প্রকাশ করতে পারি নির্ভয়ে।
অনুমতি দিলাম। বলো তুমি তোমার স্বপ্নের বাকি অংশ।
তার পরের সবটাই গা চাটাচাটির ব্যাপার ছিল হুজুর।
তার মানে?
ব্যাপারটা খুলে বল গোপাল। গা চাটাচাটির ব্যাপার কি সবটা না শুনলে বুঝতে পারব না।
তাহলে বলছি শুনুন মহারাজ গল্পের শেষ অংশ; আপনি ক্ষীরের থেকে কোনওরকমে পাড়ে উঠলুম খুব লজ্জিত হয়ে, কারণ আমার সারা গা গুয়ে ভর্তি্ আর আপনার সারা গায়ে ক্ষীরে ভর্তি। কি করা যায় ভাবতেও গা আমার ঘিন ঘিন করছে। অমাবস্যার রাত মেঘ করেছে, সারা জায়গাটা ভিষণ অন্ধকার। আমাদের দুজনের গায়েই আঠালো পদার্থ লেগে রয়েছে। কাপড় জামা গায়ে লেপটে গেছে। আপনি বললেন গোপাল, এ অবস্থায় হাঁটা যাবে না। এসো আমারা পরস্পরের গা চাটলে গা পরিষ্কার হয়ে যাবে, তাছাড়া উপায় নেই। আমি আপনার প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলুম। তারপরে আপনি আমার গা চাটতে লাগলেন আর আমিও আপনা গাচাটতে লাগলুম। মানে সবটাই গা চাটাচাটির ব্যাপার আর কি আর বেশি কিছু দেখিনি।
শেষ পর্যন্ত মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রই গোপাল ভাঁড়ের কাছে ভিষণভাবে লজ্জিত হলেন। সভাসদরা গোমড়া মুখে যে যার আসনে বসে রইল মুখটি নিচু করে, কেউ কথাটি আর বলল না। মহারাজ মনে কিন্তু রাগ করলেন না।
পূর্ববর্তী:
« গল্পের মধ্যে কটা বিয়ে
« গল্পের মধ্যে কটা বিয়ে
পরবর্তী:
গাঁইয়া – বিশ্বজিৎ চৌধুরী »
গাঁইয়া – বিশ্বজিৎ চৌধুরী »
Leave a Reply