পন্ডিতমশায় রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দেখলেন, গোপাল বারোয়ারিতলায় দাঁড়িয়ে যাত্রার রিহার্সের দেখছে। দুদিন সে পাঠালা কামাই করেছে, আজও তাহলে তার পাঠশালায় যাবার মতলব নেই। তিনি রাস্তা থেকেই হাঁক দিলেন, হাঁরে গোপাল, এখানে স্কুল কামাই করে কি করছিস?
গোপাল চমকে উঠেই ভোঁ দৌড়। সারাদিন আর পন্ডিতমশায় তার টিকিও দেখতে পেলেন না। পরদিন কিন্তু গোপাল এসে ঠিক হাজির। পন্ডিতমশায় জিজ্ঞাসা করলেন, তিন দিন কেন পাঠশালে এলি নে, গোপাল?
গোপাল উত্তর দিলেন, তরশু দিন ভোরবেলা যেই হাই তুলেছি, অমনি মুখ থেকে ধোঁয়া বেরুতে লাগল। মা তাই দেখে বললে, তোর পেটে আগুন লেগেছে বাছা, আর নড়াচড়া করিসনে, করলেই হাওয়া লেগে জোর হবে। তাইতে তোর পেট পুড়ে যাবে। ভীষণ অসুখে পড়বি মনে থাকে যেন। গুরুমশাই এই ন্যাকামি সহ্য করতে পারলেন না। দিলেন এক ঘা বেত বসিয়ে। গোপাল ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠল। তারপর গুরুমশায় জিজ্ঞাসা করলেন, এই তো গেল একদিন আর দুদিন কি হল?
গোপাল চেখ মুছতে মুছতে বললে, পরমু হল কি, কলুদের নতুন বৌটা মরে গেল। বাবা বললে, বারো মাস কলু বাড়ীর তেল খাচ্ছি। তাদের বৌ মরল, একটা দিন তো অন্তুতঃ অশৌচ নেওয়া দরকার। তাই আর বাড়ি থেকে বেরুলাম না। যদি কোন অমঙ্গল হয়?
পন্ডিতমশায় আর এক ঘা বেত বসিয়ে দিলেন, গোপাল আবার ভ্যাঁ করে কেদে ফেলল। তুমি ব্যাটা নাপিতের ছেলে, কলুর বৌ মরলে, তোমারও হলও,- অশৌচ? তারপর কাল কি হয়েছিল? বল, শীঘ্র বল না হলে আজ তোকে মেরে ফেলবো একেবারে।
গোপাল কাঁদতে কাঁদতে বললে, সে কি পন্ডিত মশায়। কাল তো বারোয়ানি তলায় আপনার সঙ্গে দেখাই হল। কামাই হলো কোথায়? আপনি আমাকে ভাল করে দেখে ডেকেছেন।
গুরুমশায় এ কথার জবাবা দিতে না পেরে বললে, আচ্ছা, নামতা পড়, আর কামাই করিস নে। মনে মনে গুরুদের বেশ খানিকটা না হেসে পারলেন না। সত্যি একখানা খাসা ছেলে বটে। এমন খাসা ছেলে পাওয়া ভার। মাটিতে পুঁতলে মাটি ফুঁড়ে উঠবে।
পূর্ববর্তী:
« কাফনের খরচ
« কাফনের খরচ
পরবর্তী:
কামের ফুরসৎ »
কামের ফুরসৎ »
Leave a Reply