একদিন এক পূজারী বামুন শালগ্রাম শিলা কাঁধে নিয়ে যজমান বাড়ি যাচ্ছেন, এমন সময়ে পথের মাঝে তাঁর ভয়ানক মলত্যাগের বেগ হল। অগত্যা সেই শালগ্রাম তিনি পাশে গাছের কাছে রেখেই অন্য এক গাছের আড়ালে বসে পড়লেন।
সেই পূজারী বামুন রাজবাড়িতেও পুজো করতেন। ব্রাক্ষ্মণের ভাগ্য মন্দ ঠিক সেই সময়ে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র যাচ্ছিলেন সেই পথে। রাজা দেখলেন পূজারী ঠাকুর নারায়ন রেখে গাছেন পিছনে বসে মলত্যাগ করছেন। রাজা পূজারী ঠাকুরকে চিনতে পেরেই চলে গেলেন রাজবাড়িতে।
সেই সময় সেই দিয়ে এক প্রতিবেশীও যাচ্ছিল। সে বামুনের কথা রাজাকে বলতে পরদিন পূজারী যখন রাজবাড়িতে পূজা করতে এসেছেন, তখন রাজার আদেশ শুনে তিনি হতবাক। পূজারী শালগ্রাম অপবিত্র করেছেন, এ পাপের শাস্ত্রমত প্রায়শ্চিত্ত তিনি যতদিন না করবেন, ততদিন আর রাজবাড়ির বিগ্রহের পূজা করতে তিনি পারবেন না। এমন কি, পূর্বের মত অন্য যজমানদের বড়ি পূজা অচ্চনা করেছেন তিনি- এমন কথা যদি রাজা জানতে পারেন, তাহলে কঠোর দন্ড দেওয়া হবে পূজারীকে।
পূজারী বামুন পূজা না করেই কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে গেলেন। শালগ্রাম কলুষিত করার প্রায়শ্চিত্ত একট ব্যায় সাধ্যব্যাপার। গরীব বামুন কোথায় পাবেন অত টাকা? টাকা না হলে কি করে হবে। ব্রাক্ষ্মণকে কাঁদতে দেখে সকলেরই দয়া হল তার উপরে, কিন্তু রাজার কাছে তার হয়ে দুকথা বলবার সাহস কারও হলও না। সকলে গোপালের কাছে যেতে বলল, একটা উপায় গোপাল বের করবেই। শেষে ব্রাক্ষ্মণ কেঁদে কেটে ধরলেন গোপালকে। রাজার একান্ত প্রিয়পাত্র ওই গোপাল, রাজাকে যদি কিছু বলতে হয়, তবে গোপালকে দিয়ে বলানোই ভাল। গোপাল ছাড়া বামুনের আর কোনও উপায় নাই।
গোপাল বললে, দুচারদিন ধৈর্য্য ধরে থাকুন ঠাকুর মশাই, সুযোগ না এলে কথা কয়ে লাভ হবে না। আমি এর একটা বিহিত করতে পারব আশা করছি। আপনি নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি যান। আপনার কথা আমার মনে থাকবে। সময় সুযোগ না হলে রাজাকে বলে কিছুই লাভ হবে না। এই বলে গোপাল বামুন ঠাকুরকে বিদায় দিল তখনকার মত।
দুই একদিন পরেই রাজা একদিন ঘোড়ার গাড়িতে বেড়াতে বেরিয়েছেন। গোপালও সঙ্গে আছে। শীতের অপরাহ্ন খানিকটা বৃষ্টিও হয়েছে, গরম শালে সর্বাঙ্গ ঢেকেও তবু রাজ মাঝে মাঝে শীতে কাঁপছেন। এমন সময়ে হঠাৎ গাড়ির ঘোড়াটা মলত্যাগ করলে। অমনি গোপাল হতাশভাবে বলে ফেললে, কি সর্বনাশ।
রাজা অবাক হয়ে বললেন, কি সর্বনাশ।
গোপাল বললে, সর্বনাশ নয়? এই শীতের সন্ধ্যায় এখন স্মান করে মরতে হবে মহারাজাকেও আমাকেও। গরম মলত্যাগ করে আমাদের অশুচি করে দিলে। এখন কি করা যায় ভেবে দেখুন, মহারাজ।
মহারাজ সবিষ্ময়ে বললেন, ঘোড়া মলত্যাগ করেছে, তাতে আমরা আশুচি হবো কেন, আমি ত কিছু বুঝতে পারছি না। গোপাল তখনই উত্তর দিলে, তাহলে ব্রাক্ষ্মণ মলত্যাগ করাতে নারায়ন অশুচি হলেন কেন? ঘোড়াও যেমন বাহন মাত্র, ব্রাক্ষ্মণও তেমনি দেবতার বাহন ছিল মাত্র। তার কি অপরাধ হল বলুন।
রাজা বুদ্ধিমান ব্যক্তি তিনি এভাবে বিচার করে দেখেননি। গোপালের কথা শুনে তিনি অনেক চিন্তা করলেন। তারপর বললেন, তুমি যা বললে, সেটা ন্যায়শাস্ত্রের হিসাবে সঙ্গত বটে, কিন্তু হিন্দুর ধর্ম সংষ্কার অনুযায়ী সঙ্গত নয়। মানুষে আর পশুতে সব বিষয়েরইপার্থক্য আছে। যাই হোক ব্রাক্ষ্মণ যে বাধ্য হয়েই এ রকম অবস্থায় মলত্যাগ করেছিল, তা আমি বুঝতে পারছি। প্রায়শ্চিত্ত তাকে করতে হবেই, তবে তার ব্যয় আমি দেবো। তুমি তাকে কালই প্রায়শ্চিত্ত করে আবার যথারীতি পূজা করতে বল। তোমাকে বুদ্ধিতে হারাতে পারব না, তবে নিশ্চয় বামুন ঠাকুর তোমাকে এরজন্য ঘুষ দিয়েছে আমার মনে হচ্ছে।
গোপাল কানে হাত দিয়ে বলে, রাম রাম। এ কথা বলবেন না মহারাজ। ঘুষ কেবল মহারাজের কাছে নিই, তাই বলে গরীব মানুষের কাছে ঘুষ নেব সে মতি যেন কোনদিন না হয় হুজুর। এই বামুন ঠাকুর খুব গরিব কিনা। ভগবান আপনার মঙ্গল করুন।
পূর্ববর্তী:
« পুস্তকপাঠ – ন. স্তানিস্লাভ্স্কি
« পুস্তকপাঠ – ন. স্তানিস্লাভ্স্কি
পরবর্তী:
পূজাসংখ্যা বনাম প্রেস »
পূজাসংখ্যা বনাম প্রেস »
Leave a Reply