গোপালের স্ত্রী সব সময় বায়না ধরত–মেয়ে জামাইকে আনবার জন্য। একদিন স্ত্রী জিদ ধরল ওদিকে যাচ্ছে যখন, মেয়ে জামাইকে নিয়ে এসো। সবাই কেমন সাধ আহ্লাদ করে। কিন্তু আমরা এসব করতে পারি না।
স্ত্রীর কথা শুনে গোপাল ভাবল, জামাইরা যত বাড়িতে না আসে ততই ভালো। জামাই আনা মানেই হাতির খরচ। আর বাবাজী একবার এলে হঠাৎ বিদায় হয় না। মুখে বলল, এই তো মেয়ে জামাই ছমাস আগে এসে ঘুরে গেল। এর মধ্যে আবার আসবে কি? এলেই দুমাসের ধাক্কা। আমার এখন অবস্থা খুব খারাপ। টাকা রোজগার ভাল যাচ্ছে না। মেয়ে জামাই এলে সংসারের ধাক্কা সামলাব কি করে? এখন থাক, ২/১ মাস পরে আসবে।
গোপালের স্ত্রী রেগে বলল, তুমি কি হাড় কেপ্পন গো। এমন শ্বশুর যেন কারও না হয়। ভগবানের করুনায় আর মহারাজের কৃপায় তোমার কিসের অভাব? গোপালের স্ত্রীর নানা কথা বলে ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিলে। তাই বাধ্য হয়ে গোপাল লোক পাঠাল মেয়ে আর জামাইকে নিয়ে আসার জন্য।
মেয়ে জামাই ঠিক সময়ে এলো। কিন্তু জামাই শ্বশুরবাড়িতে রোজ চব্যচোষ্য লেহ্য পেয় আদরে পেয়ে আর যাওয়ার নামটি করে না একেবারেই। জামাই যেতে চাইলেও গোপালের স্ত্রী ছাড়তে চায় না কিছুতেই। এই তো এলে বাবা। এখনই যাই যাই করছ কেন? দুমাসের আগে তোমাদের কিছুতেই ছাড়ব না এবার। তোমার বাড়িতে কী দরকার যে বাড়ি না গেলে চলবে না, এখন যাওয়া চলবে না।
এদিকে খরচের বহর দেখে গোপাল রোজই চোখে সর্ষে ফুল দেখতে লাগল। অবশেষে গোপাল ভেবে চিন্তে একটা বেশ মনের মত উপায় আবিষ্কার করে ফেলল মনে মনে। গোপাল একদিন বিকেলবেলা জামাইকে একান্তে ডেকে বলল, বাবাজী, এখানে বড় ছিঁচকে চোরের উৎপাত। ছিঁচকে চোরের জ্বালায় গাছে লেবু রাখা দা। প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যের সময় ব্যাটা চোর এসে লেবু তুলে নিয়ে যায়। আমি সাবধান হয়েও চোরকে আজ পর্যন্ত ধরতে পারিনি। যদি বা ধরা যেত- আমি আবার সব সময় বাড়িতে থাকি না কি করে চোর ধরব তুমি সব সময় বাড়িতে থাক দেখ যদি চোর ধরতে পার কিনা। তুমি বাবজী, সন্ধ্যের পর বৈঠকখানা ঘরে বসে-লেবুগাছের দিকে একটু নজর রেখো তো। চোরকে ধরলে একেবারে জাটটে ধরবে। লেবু চোর ব্যাটাকে শায়েস্তা না করলে চলছে না। আজকাল লেবুর যা বাজার। বাজারে লেবু পাওয়াই যায় না। এক একটা লেবুর দাম অনেক।
শ্বশুরের কথা শুনে বলে, আপনি কিছু ভাববেন না বাবা। আমার নজর এড়িয়ে চোর কিছুতেই লেবু চুরি করতে পারবে না। চোর তো সামান্য লেবু চুরি করতে আর মাঝ রাতে আসবে না, সন্ধ্যের ঠিক পরেই আসবে। ব্যাটাকে একদিন না একদিন আমি ঠিক ধরে ফেলবো। লেবু-চুরির কথা এর আগে বলেননি কেন আপনি? আমি প্রায় এক মাস এলাম আপনার বাড়ীতে।
সেদিন সন্ধ্যের সময় গোপাল বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে, চুপি চুপি বললে, যাও তো, লেবু গাছ থেকে চট করে একটা লেবু নিয়ে এসো তো। লেবু এনে আমায় সরবৎ করে দাও। আমাকে এখনি একবার রাজবাড়িতে যেতে হবে, যদি কিছু টাকা পয়সা রোজগার করতে পারি। হাত একেবারে খালি।
সেদিন বাড়িতে কেউ ছিল না। ছেলেমেয়েরা বেড়াতে গেছে। কোন লোক না থাকায় গোপালের স্ত্রী অন্ধকারে নিজেই লেবু আনতে গেল। ছেলেমেয়েদের গোপাল কায়দা করেই আগে থেকে বেড়াতে পাঠিয়ে দিয়েছিল যাতে, জামাই ছাড়া বাড়িতে আর কেউ না থাকে। কেউ উপস্থিত থাকলে কাজ হবে না। জামাই শ্বশুরের কথা মত ওঁৎ পেতে বসে ছিল। যেমনি গোপালের বৌ লেবু পাড়তে ঢুকেছে অমনি জামাই অন্ধকারে চোর ভেবে শ্বাশুড়ীকে জাপ্টে ধরল কষে। এমন জাপ্টে ধরল যে শাশুড়ী কোনও মতে পালিয়ে যেতে পারল না। টানা হ্যাঁচড়া করতে করতে জামাই চেঁচাল আজ তোর লেবু-চুরি করা বের করছি। তুমি ভারি ঘুঘু-না। রোজ রোজ লেবু চুরি করার মজা তোমায় দেখাচ্ছি। তুমি মনে করেছ, কেউ বাড়িতে নেই?
গোপাল এই অবস্থার জন্য তৈরিই ছিল। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তাড়াতাড়ি ঘরের হ্যারিকেনটা নিয়ে ছুটে গেল। গিয়ে দেখল জামাই বাবাজী তখনো শাশুড়ীকে কষে জাপ্টে ধরে রয়েছে। শাশুড়ী প্রাণপণে জামাইয়ের হাত থেকে রেহাই পাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই ছাড়াতে পারছে না দু-জনের মধ্যে ঝাপটা ঝাপটি হচ্ছে। তাই দেখে গোপাল বললে, তাইতো বলি- জামাই আনার এত শখ কেন? এবার বুঝতে বাকি নেই।
এই ঘটনায় শাশুড়ীও যেমন লজ্জা পেল, জামাই ও তেমনি লজ্জা পেল। তারপরদিন জামাই লজ্জায় সেই যে মেয়েকে নিয়ে চলে গেল-তারপর আর শশুরবাড়ি এল না। গোপালের স্ত্রীও মেয়ে জামাইকে আনার কথা আর মুখ ফুটে গোপালের কাছে কোনওদিন উন্থাপন করতে পারল না। গোপাল সকলের মেয়ে জামাই এলে কেবল মুচকি মুচকি হাসে আর তাকে স্ত্রীকে দেখে।
পূর্ববর্তী:
« তাই তেনারে দেহি
« তাই তেনারে দেহি
পরবর্তী:
তাজমহল কে তৈরি করেছিল »
তাজমহল কে তৈরি করেছিল »
Leave a Reply